Translate

Sunday, November 30, 2014

একজন মুসলমান ব্যক্তির স্বেচ্ছায় সনাতন ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া





ভারতের মধ্য প্রদেশের কারগোনের বাসিন্দা, জনাব খলিলউলাহ খান স্বেচ্ছায় সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি পেশায় একজন উকিল এবং এখন একজন কৃষ্ণভক্ত। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, "আমি বহুদিন ধরে বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ণ করছি এবং বৈদিক দর্শন ও চর্চা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। আমার মনে হয়েছে, আমি সেই প্রকৃত সত্য খুঁজে পেয়েছি যেটা আমি আজীবন ধরে খুঁজে বেরিয়েছিলাম। অবশেষে প্রচন্ড অস্বস্তি, উভয় সংকটতা ও সমাজের আপত্তিকে দূরে ঠেলে আমি সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছি"।
তিনি আরও বলেন, "আমার স্ত্রীর মস্তিষ্কে ব্যাঘাত ঘটার ফলে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে দীর্ঘদিন যাবত্‍ অচেতন ছিল। ব্যয়বহুল হাসপাতালে তার চিকিত্‍সা চলছিল। তার বেঁচে থাকা নিয়ে স্বয়ং ডাক্তারও আশঙ্কাগ্রস্থ ছিল। ঠিক এই সময় আমার এক শুভাকাঙ্কী আমার স্ত্রীর সুস্থ হয়ে উঠার মনোকামনা নিয়ে আমাকে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র - হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে / হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে - জপ করতে বলে। ঠিক সেই সময় থেকে আমার স্ত্রীর শারীরিক উন্নতি হতে শুরু করে। কিছুদিন পর তার জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসে এবং তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। অধিকন্তু তার এখনও স্বাভাবিক চিকিত্‍সা চালু আছে। তারপর থেকে আমি পরমেশ্বর ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হয়েছি। এখন আমি একজন নিরামিষভোজী বৈষ্ণবীয় হিন্দু॥

অদ্ভুত রান্নাঘর !!! হ্যাঁ, জগন্নাথ পুরী মন্দিরের রান্নাঘরকে বলা হয় পৃথিবীর অদ্ভুদ ও বড় রান্নাঘর । কেন এই রান্নাঘর অদ্ভুত তা আপনাদের কাছে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি ।



জগন্নাথ পুরীতেতো এমনিতেই জগন্নাথ অনেক লীলা করে কিন্তু তার রান্নাঘরের লীলা আমরা কম বেশি সবাই জানি ।এই রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না । উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয় আর তার নিচেই সেবকরা এসেই রান্না কার্য সম্পন্ন করে ।

এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পায় । আর এমনিতে পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রসাদ পেয়ে থাকে ।

এই রান্নাঘরটি ৯টি ভাগে বিভক্ত । যাদের দুটি ভাগ ২৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এ দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে । এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি চুলা যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরেও বেশি ।

তবে যেটি অদ্ভুত ব্যাপার তা হল রান্না করার বিষয়টি, চুলাগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় নয়টি পাত্র থাকে । শুধুমাত্র এ পাত্রগুলোর নিচে অবস্থিত আগুনের মাধ্যমেই উপরের পাত্র থেকে শুরু করে শেষে নিচের

পাত্রটির রান্না অদ্ভুদ ভাবে সম্পন্ন হয় ।এই রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার সেবক । তার মধ্যে ৫০০ সেবক রয়েছে কেবলমাত্র চুলাতে রান্না করার জন্য সহায়ককারী হিসেবে ।

এখানে কোন পুরাতন পাত্রে রান্না করা হয় না, প্রতিদিন নতুন নতুন পাত্রে রান্না করা হয়, তাই একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়, আরেক দল তা সরবরাহ করে রান্নাঘরে নিয়ে যায় । আরেকদল পাত্রগুলো ধৌত করে, আরেকদল পাত্রে জল

ভর্তি করে চুলাতে নিয়ে যায় তবে এখানে আরেকটি অদ্ভুত বিষয় হল রান্না করার জন্য এখানে গঙ্গা আর সরস্বতী নদী রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যা বাহির থেকে দেখা যায় না যা সত্যিই অদ্ভুত !!!!

কেউ কেউ সব্জি ধৌত করছে আর কেউ কেউ সব্জি কাটছে আর কেউ মসলা তৈরি করছে ।রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকে তাদের বয়স যখন ১২ বছর হয় তখন থেকে তারা ট্রেনিং এ নেমে পড়ে এভাবে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবা সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকে ।

এই রান্নাঘরে ১০০টির উপর আইটেম রান্না করা হয় যা দুটি ভাগে বিভক্ত । এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয় । পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলো যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি । অপরদিকেসুক্কা বলা হয় বিস্কিট, মিষ্টান্ন আর বিভিন্ন ধরনের পিঠা ।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, জগন্নাথের জন্য যেসমস্ত ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয় সেগুলো দু হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয় । অন্য কোন অঞ্চল থেকেউৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না ।

এই পুরী জগন্নাথ স্বয়ং পরিচালনা করে আর মহা লক্ষ্মী স্বয়ং জগন্নাথের জন্য নিজ হাতে রান্না করে । তাইতো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয় ।

Monday, August 18, 2014

প্রশ্ন: মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে হিন্দুশাস্ত্র কী বলে? এ বিষয়ে হিন্দু বিজ্ঞানীদের কোন অবদান আছে কি?



উত্তর:
আধুনিক বিশ্বে সকলের ধারণা মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ শক্তি নিউটন প্রথম আবিষ্কার করেছেন। অনেকেই জানেন না যে, এ বিষয়ে হিন্দুদের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদে স্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

সবিতা যন্ত্রৈঃ পৃথিবী মরভণাদস্কম্ভনে সবিতা দ্যামদৃংহৎ।
অশ্বমিবাধুক্ষদ্ধু নিমন্তরিক্ষমতূর্তে বদ্ধং সবিতা সমুদ্রম ॥ ঋগ্বেদ, ১০/১৪৯/১
অনুবাদ: সূর্য রজ্জুবৎ আকর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। নিরাধার আকাশে দ্যুলোকের অন্যান্য গ্রহকেও ইহা সুদৃঢ় রাখিয়াছে। অচ্ছেদ্য আকর্ষণ রর্জ্জুতে আবদ্ধ, গর্জনশীল গ্রহসমূহ নিরাধার আকাশে অশ্বের ন্যায় পরিভ্রমণ করিতেছে।

দেখুন, আকাশ যে ‘নিরাধার’ এবং ‘রজ্জুবৎ আকর্ষণ’ অর্থাৎ মহাকর্ষ শক্তির দ্বারাই যে সেই নিরাধার আকাশে সূর্য ও গ্রহসমূহ নিজ অক্ষরেখায় সুদৃঢ় রয়েছে -এখানে সেকথা বলা হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক ধর্মগ্রন্থে আকাশকে স্পষ্টভাবে ‘পৃথিবীর ছাদ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ এই সব ধর্মমতের জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে বেদে আর্য ঋষিগণ আকাশকে ‘নিরাধার’ অর্থাৎ পৃথিবীকে ও গ্রহসমূহকে শূন্যে ভাসমান বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আরও লক্ষণীয়, মহাকর্ষ শক্তিতে আবদ্ধ গ্রহসমূহ যে নিরাধারে অর্থাৎ মহাশূন্যে স্থির নয়, বরং পরিভ্রমণ করছে নিজ কক্ষপথে -এই তত্ত্বও আবিষ্কার করেছিলেন বৈদিক ঋষিগণ। এমনকি সূর্য নিজেও যে তার নিজস্ব কক্ষপথে চলছে সেই অত্যাশ্চর্য গূঢ় বিজ্ঞানও আলোচিত হয়েছে নিম্নের মন্ত্রে :

আকৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নিবেশয়ন্নমৃতং মর্তঞ্চ।
হিরণ্ময়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভুবনানি পশ্যন্ ॥ ঋগ্বেদ, ১/৩৫/২
অনুবাদ: সূর্য আকর্ষণযুক্ত পৃথিব্যাদি লোক-লোকান্তরকে সঙ্গে রাখিয়া নশ্বর-অবিনশ্বর উভয় পদার্থকে নিজ নিজ কার্যে নিযুক্ত রাখিয়া এবং মাধ্যাকর্ষণ রূপে রথে চড়িয়া যেন সারা লোকান্তর দেখিতে দেখিতে গমন করিতেছে।

খুব অবাক হতে হয়, পৃথিবী যেমন চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে, তদ্রুপ সূর্যও যে তার গ্রহ-উপগ্রহসমূহকে সঙ্গে নিয়ে নিজের কক্ষপথে গমন করছে -এই গভীর জ্ঞানও পবিত্র বেদে আলোচিত হয়েছে।

মহাবিজ্ঞানী ভাস্করাচার্য (১১৫০ খ্রি:) তাঁর ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ নামক জ্যোতিঃশাস্ত্রের গোলাধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-

“আকৃষ্টি শক্তিশ্চ মহী তয়া যৎ স্বস্থং স্বাভিমুখী করোতি।
আকৃষ্যতে তৎ পততীব ভাতি সমে সমন্তাৎ কুবিয়ং প্রতীতিঃ॥”
অর্থাৎ “সর্ব পদার্থের মধ্যে এক আকর্ষণ শক্তি বিদ্যমান রহিয়াছে, যে শক্তি দ্বারা পৃথিবী আকাশস্থ পদার্থকে নিজের দিকে লইয়া আসে। যাহাকে ইহা আকর্ষণ করে তাহা পতিত হইল বলিয়া মনে হয়।”

অর্থাৎ প্রাচীন ঋগ্বেদ শাস্ত্রের পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করলেও হিন্দু বিজ্ঞানী ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫) বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের (১৬৪২-১৭২৭) জন্মেরও কমপক্ষে পাঁচশত বছর পূর্বে মহাকর্ষ শক্তি আবিষ্কার করে তাঁর গ্রন্থ ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’তে আলোচনা করে গিয়েছেন।

আপনি কি জানেন?


বাংলা সাত বারের নাম ও
বাংলা বার মাসের নাম হিন্দু
দেবতাদের নাম
অনুসারে হয়েছে?তাহলে দেখুন
শনিবার-শনি দেবতার নাম
অনুসারে
রবিবার-রবি বা সূর্য দেবতার
নাম অনুসারে
সোমবার-সোম বা শিব দেবতার
নাম অনুসারে
মঙ্গলবার-ধূপ বা দ্বিপের নাম
অনুসারে
বুধবার_বৃহস্প্র
তিবার_শুক্রবার- গ্রহের নাম
অনুসারে
বৈশাখ-কীর্ত্তন নাম অনুসারে
জৈষ্ঠ-অগ্নি দেবতার নাম
অনুসারে
আষাঢ়-আষাঢ়ি পূর্ণিমার নাম
অনুসারে
শ্রাবন-ব্রাক্ষ্ মা দেবের নাম
হতে
ভাদ্র-শ্রীকৃষ্ণ ের বাঁশি হতে
আশ্বিন-অশ্বিনী কুমারের নাম
হতে
কার্তিক-কার্তিক দেবতার
নাম অনুসারে
অগ্রহায়ন-সূর্য দেবতার
পরিক্রমণ হতে
পৌষ-পার্বন হতে আগত
মাঘ-তীর্থস্হান হতে আগত
ফাল্গুন-জলন্ত কাঠ বা যজ্ঞ
হতে আগত
চৈত্র-বাসন্তী দেবীর
শাড়ি হতে আগত
মূলত সূর্যকে কেন্দ্র করে এসব
নামের উৎপত্তি ।সম্রাট আকবর
আরবের সাথে হাত মিলিয়েও এই
নামগুলি পরিবর্তন
করতে পারে নাই ।আর পারবেও
না.

গীতা তথ্য কনিকা



গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম ।
গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে ।
গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার এমনকি গীতায় এমন কিছু আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ
মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ ।
গীতায় আছে ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক ।
গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্ম ষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তি ষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞান ষটক ।

যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছরেরও আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন ।
গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা মাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন ।
গীতাতে মাং এবং মামেব কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার আর যুক্ত আছে ৪৯ বার ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন ।
গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ ।
ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায় ।
ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও গীতা বলেছে ।
(সংক্ষিপ্ত)
Photo: গীতা তথ্য কনিকা ☛ গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম । গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে । গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার এমনকি গীতায় এমন কিছু আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ । গীতায় আছে ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক । গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্ম ষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তি ষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞান ষটক । ☛ যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছরেরও আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন । গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা মাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন । গীতাতে মাং এবং মামেব কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার আর যুক্ত আছে ৪৯ বার । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন । গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ । ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায় । ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও গীতা বলেছে । (সংক্ষিপ্ত)

Thursday, August 14, 2014

দ্রৌপদীর পাঁচজন স্বামী হওয়া সত্ত্বে ও তিনি সতী বলে বিখ্যাত। অথচ এ সমাজে কোন মেয়ের পাঁচটা স্বামী হলে তাকে অসতী বলা হবে কেন ?

দ্রৌপদীর পাঁচজন স্বামী হওয়া সত্ত্বে ও তিনি সতী বলে বিখ্যাত। অথচ এ সমাজে কোন মেয়ের পাঁচটা স্বামী হলে তাকে অসতী বলা হবে কেন ?

ব্যাখ্যা করার আগে একটি বিষয় বলে নেই,--দ্রোপদী বাসুদেব কৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি বহুপতিকে সমর্থন করছেন? তখন দৃঢ় কণ্ঠে বাসুদেব কৃষ্ণ বলেছিলেন, না। এটিকে ধর্মের নাম দিয়ে আমি সমগ্র স্ত্রীলোকের হৃদয়ে দুঃখ দিতে পারি না। এ অধর্ম, আর এ অধর্মই থাকবে। কিন্তু তোমার হৃদয়ের করুনা তোমাকে দিয়ে এই নির্ণয় করিয়েছে। করুনা তো ধর্মের আঁধার। আর এই বিষয়টি তোমার জন্য, কেবল তোমার জন্য পাপ নয়।
দ্রৌপদী এ সমাজের মেয়েদের মতো কোনও সাধারণ মেয়ে ছিলেন না। দ্রুপদ রাজার যজ্ঞের অগ্নি থেকে তাঁর জন্ম হয়েছিল। পূর্বজীবনে তিনি এক ঋষির কন্যা ছিলেন। অতি কঠোর তপস্যা করে তিনি শ্রী শিব ঠাকুরের প্রীতি সাধন করেছিলেন। তখন প্রসন্ন হয়ে শিব ঠাকুর তাঁকে বর দিতে চাইলে তিনি করজোড়ে শিব ঠাকুরের কাছে পতি লাভের বাসনা ব্যাক্ত করেন। “হে মহাদেব, যদি প্রসন্ন হয়ে থাকেন, তবে যাতে আমি সর্বগুণ সম্পন্ন পতি লাভে চরিতার্থ হতে পারি, এরূপ বর প্রদান করুন।' এই কথা পাঁচবার উচ্চারণ করেন এবং প্রতিবারইশিব ঠাকুর ‘তথাস্তু’ বলেছিলেন। তারপর শিব বলেন,“হে কন্যা,তুমি পাঁচবারই পতি বাসনা করেছ, তাই পরজন্মে রাজকন্যা রূপে জন্ম নিয়ে দেব গুনসম্পন্ন পঞ্চপতি লাভ করবে।” তারপর পরজন্মে সেই ঋষিকন্যা মহর্ষি উপযাজ কৃত যজ্ঞ থেকে উত্থিতা হন। দ্রুপদ রাজার কন্যারূপে তিনি দ্রৌপদী নামে আখ্যাতা হন। তারপর তাঁর পঞ্চপতি হওয়ার ঘটনাটিও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগণ সমর্থন করেছেন।

Wednesday, August 13, 2014

মৃতদেহ সৎকার



সনাতন ধর্মে মৃতদেহ পোড়াবার তিনটি কারন আছে।

আধ্যাত্মিক কারণঃ আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারিরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। এই ত্রিতাপদগ্ধ সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহন করে মানুষ দুঃখজ্বালা ভোগ করুক এটা কেউ চাই না। যে দেহে তিনি এতদিন বাস করেছেন, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সুখের স্বাদ তাকে দিয়েছেন সে দেহের প্রতি আকর্ষণ ও মায়া থাকা স্বাভাবিক। দেহের প্রতি আকর্ষণে পুনঃ দেহ ধারনে তার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে, ঐ আকাঙ্ক্ষা দূর করার উদ্দেশেই আকর্ষণের বস্তু দেহটিকে পোড়ানো হয়।

সামাজিক কারণঃ আর্য ঋষিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ সৃষ্টি হবে এবং এমন একদিন আসতে পারে যখন স্থানাভাব দেখা দেবে। মানুষের দেহ না পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে দিলে ক্রমশ মাটিতে রাখার জায়গার অভাব দেখা দিতে পারে। এই কারনেই দেহ পোড়াবার বাবস্থা।

বৈজ্ঞানিক কারণঃ মানুষ বিভিন্ন কারনে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্য রোগে মৃত্যুই সর্বাধিক। এই সকল মৃতদেহে পচন ধরলে পরিবেশে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব চিন্তা থেকেই আর্য ঋষিগণ শব পোড়াবার বিধি দিয়েছে।

মুখাগ্নি করার কারণঃ
আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারি বিশ্বাস করি যে, মানুষ মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয় অথ্যাৎ দেবলোকে যায়। কিন্তু, তিনি স্বর্গে বা দেবলোকে যাবেন কিভাবে? বৈদিক নিয়ম অনুসারে দেবলোকে বা স্বর্গলোকে পাঠাতে হলে দেবতাদের পুরোহিত অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। অগ্নিদেবই সে অর্চনা বা আহুতি দেবলোকে নিয়ে যান। তাই যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তার প্রাণবায়ু অগ্নিদেবকে আহুতি না দিলে তিনি কি করে স্বর্গবাসী হবেন? প্রানবায়ু মুখ দিয়ে বের হয় বলে মুখে অগ্নি সংযোগ করে মন্ত্র পাঠ করতে হয়-

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা ।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু”

অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

Wednesday, July 2, 2014

মোশা বাহিনীর টর্চার শেল, নির্মম নির্যাতন আতঙ্কে রূপগঞ্জের ৭০টি সংখ্যালঘু পরিবার

রূপগঞ্জের ত্রাস মোশাররফ হোসেন মোশা বাহিনীর আতঙ্কে নাওড়া এলাকার ৭০টি সংখ্যালঘু পরিবার আতঙ্কে ভুগছে। সেখানে গড়ে ওঠা মোশা বাহিনীর টর্চার সেলে সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজনকে ধরে নিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি রাতেই এসব সংখ্যালঘু পরিবারের গৃহবধূ ও সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে মোশার রংমহলে ফূর্তি করা হয়। নির্যাতনের শিকার অনেকেই চিকিৎসা নিতে এলাকার বাইরে যেতে পারছে না। মোশা বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গোটা এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখে। বর্তমানে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। মোশা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা কেউ টুঁ-শব্দ করতে সাহস করেন না। যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে মোশা রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। মোশা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক দশক আগে নাওড়া এলাকায় প্রায় ১৫০ সংখ্যালঘু পরিবার বসবাস করত। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখানকার সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপরে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। ওই সময় থেকেই মোশা বাহিনীর প্রধান মোশাররফ হোসেন মোশা, বদিউজ্জামান বদির লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি ও সুন্দরী মেয়েদের ওপর। এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের ওপর নির্যাতন। যারা জমি আর ঘরের সুন্দরী নারী দিতে অস্বীকৃতি জানাতো তাদেরই মোশার টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করত। গত পাঁচ বছরে মোশা বাহিনীর নির্যাতন আর অত্যাচার সইতে না পেরে ৮০টির মতো পরিবার ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। বর্তমানে যারা বসবাস করছে তারা পৈতৃক ভিটে রক্ষায় মাটি আঁকড়ে কোনো মতে বেঁচে আছেন।

মোশার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সংখ্যালঘু পরিবারের কেউ জমি কিংবা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে রাতে অস্ত্রের মুখে তুলে নেওয়া হয় টর্চার সেলে। পরে রশি দিয়ে বেঁধে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত কায়দায় নির্যাতন করা হয়। সম্প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আশাপূর্ণ দাস তার জমি বিক্রি থেকে মোশার দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। তাকে টর্চার সেলে ধরে নিয়ে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে শরীরে লবণ ও মরিচের গুঁড়া মেখে বেধড়ক পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাওড়া এলাকার একজন সংখ্যালঘু গৃহবধূ বলেন, 'একদিন আমারে দেইখ্যা মোশার খারাপ নজর পড়ে। পরে আমারে কুপ্রস্তাব দেয়। রাজি না অওনে রাইত কইরা হের লোকজন অস্ত্র দেহাইয়া আমার সোয়ামীর সামনে থেইক্যা ধইরা নিয়া যায়। সারারাইত নির্যাতন কইরা ছাইড়া দেয়। জীবনের ভয়ে মামলাও করবার পারি নাই। ভগবান ওর বিচার করবো।' গত কয়েক দিন আগে এক কর্মকার পরিবারের ১৬ বছরের যুবতী মেয়েকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায় মোশা বাহিনী। পরে হাত রশি দিয়ে বেঁধে মোশা ও বদি রাতভর পাশবিক নির্যাতন করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই যুবতী জানায়, তাকে রাতে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে মোশার রংমহলে বিবস্ত্র করে হাত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে মোশা ও বদি মিলে নির্যাতন করে। এ সময় হুমকি দিয়ে বলে, মুখ খুললে জীবনে মেরে ফেলবে। সূত্রটি আরও জানায়, নিজেদের রংমহল ছাড়াও মোশা ও বদি ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে ফূর্তি করে। গত দুই মাস আগে ঢাকার এক আবাসিক হোটেলে নারী নিয়ে ফূর্তি করার সময় বদিউজ্জামান বদিকে পুলিশ হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে ৪০ হাজার টাকায় রফাদফা শেষে নিজেকে কোনো মতে রক্ষা করে বদি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংখ্যালঘু পরিবারের কয়েকজন বলেন, আমরা ভোট দেই শেখের বেটিরে। নৌকা মার্কা আমাগো জান-পরাণ। শেখের বেটি আমাগো জীবন। এটাই কি আমাদের অপরাধ?

সরেজমিন এলাকা ঘুরে জানা যায়, মোশা বাহিনীর ভয়ে সংখ্যালঘু পরিবারগুলো ঠিকমতো কাজে যেতে পারছে না। এসব পরিবারের কেউ কামার, কেউ দিনমজুর, কেউ মুড়ি বিক্রেতা আবার কেউবা কৃষক। এদের অনেকেই এখন খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। স্থানীয়রা জানান, যেসব পরিবার মোশার নামে জমি লিখে দিতে না চায় তাদেরই কাজে যেতে দেওয়া হয় না। মোশাররফ বাহিনী গোটা এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অপরিচিত কেউ এলাকায় ঢুকতে পারে না। আর যারা এলাকায় বসবাস করছে তারাও এলাকার বাইরে যেতে পারছে না। এলাকাবাসী বলেন, নাওড়া এলাকাটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। গ্রামটির দক্ষিণে খাল। পশ্চিমে বালু নদী। উত্তরে-পূর্বে দীর্ঘ ফাঁকা জায়গা। দুর্গম এ এলাকায় পুলিশ কিংবা র‌্যাবের যেতে লাগে দীর্ঘ সময়। ফলে মোশা ও তার বাহিনী অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। প্রশাসনের লোকজন এলাকায় পৌঁছতে-পৌঁছতে মোশা বাহিনী ঘটনা ঘটিয়ে আত্দগোপনে চলে যায়। প্রশাসনের লোকজন চলে আসলে তারা আবার এলাকায় দাবড়ে বেড়ায়। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রূপগঞ্জের মিনি গডফাদারখ্যাত মোশার সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের রয়েছে কানেকশন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি ও মিনি গডফাদার নূর হোসেন, সুব্রত বাইনসহ অনেক কিলারের সঙ্গে মোশার ছিল সম্পর্ক। মোশার রয়েছে অস্ত্রের ভাণ্ডার। রয়েছে মাদকের গোডাউন। মোশা নিজেকে কোনো সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক, কোনো সময় ডিআইজির আত্দীয়, কোনো সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার আত্দীয় আবার কোনো সময় দুই-তিনজন এমপির ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন বর্তমানে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি মোশা বাহিনীর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। মোশা বাহিনীর নির্যাতন ও অত্যাচার থেকে বাঁচাতে সংখ্যালঘু পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2014/06/21/12993#sthash.QCPfw5Zw.dpuf

Tuesday, July 1, 2014


জাকির নায়েককে ন্যাংটা করে দিল কোচিপোস্ট : প্রতি মিনিটে পাঁচটি ভুল বলেন জাকির নায়েক



নিজের প্রতিটি বক্তৃতায় ‘পণ্ডিত’ জাকির নায়েক হাজারও তথ্য দিয়ে শ্রোতা-দর্শকদের বিমোহিত করেন। তার বক্তব্যে থাকে তত্ত্ব ও তথ্যের প্রাচুর্য। এ কারণে সাধারণ শ্রোতারা বিশ্বাস করতে প্রলুব্ধ হন যে, জাকির নায়েক আসলেই একজন জবরদস্ত পণ্ডিত, জ্ঞানী লোক। কিন্তু কোচিপোস্ট এই জাকির নায়েকের পাঁচ মিনিটের একটি বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বলছে, তিনি আসলে কথা বলতে গিয়ে প্রতিমিনিটে কমপক্ষে পাঁচটি ভুল করেন।

পাঠকদের সুবিধার্থে পুরো ক্লিপটি বাংলায় ভাষান্তর করে দেওয়া হলো।

জাকির নায়েক তার এই বক্তৃতায় বলেন, ডারউইন গবেষণা করতে কেলাট্রপিক নামের একটি দ্বীপে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কেলাট্রপিক দ্বীপ বলতে পৃথিবীতে কিছু নাই। ডারউইন আসলে গিয়েছিলেন গেলাপোগাস দ্বীপে।

* এরপর জাকির নায়েক বলেন, ডারউইন দেখতে পান, গেলাপোগাস দ্বীপের পাখিরা একটি বাস্তুতন্ত্রের সদস্য হিসেবে খাদ্য প্রাচুর্যে বসবাস করছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, ডারউইন আসলে দেখতে পেয়েছিলেন, পাখিগুলো ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের সদস্য হিসেবে বসবাস করছে।

*এ প্রসংগে জাকির নায়েক আরও বলেন, বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য প্রাচুর্যের ওপর ভিত্তি করে পাখিদের ঠোঁটের আকার ছোট-বড় হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে, ডারউইন বলছেন, বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য প্রাচুর্যের ওপর ভিত্তি করে পাখির আকার, স্বর, রঙ ও খাদ্যাভাসও বদলে যায়।

*এরপর জাকির নায়েক বলেন, ডারউইন পাখিদের আচরণের এই পরিবর্তন শুধু একটি প্রজাতির পাখিতে লক্ষ্য করেছিলেন। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- ডারউইন আসলে এই পরিবর্তন চৌদ্দটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে খেয়াল করছেন।

*এবার জাকির নায়েক বলেন, চার্লস ডারউইন এই কথাগুলো থমাস থর্মটন নামের একজন বন্ধুকে চিঠি লিখে পাঠান। কিন্তু সত্য হচ্ছে, ডারউইনের থমাস থর্মটন নামের কোন বন্ধু কোন কালেই ছিল না।

*জাকির নায়েক বলেন, চার্লস ডারউইন নিজেই বলছেন, প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বদলে যাওয়ার ধারাবাহিকতা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। ডারউইন তা স্বীকার করলেও মেনে নেননি। কিন্তু সত্য হচ্ছে, প্রজাতির ধারাবাহিকতা স্পষ্ট বুঝতে না পারার সাথে বিবর্তনবাদ মিথ্যা হয়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। বরং চার্লস ডারউইন দেখিয়েছেন, কিভাবে এই ধারাবাহিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

*জাকির নায়েক এ প্রসঙ্গে আরও বলেন- এর কারণ হচ্ছে, চার্চ বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে, চার্চ কখনই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ছিল না।

* জাকির নায়েক বলেন, চার্চ গ্যালিলিওকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু সত্য হচ্ছে, চার্চ কখনই গ্যালিলিওকে মৃত্যুদণ্ড দেয়নি। আসলে তাকে ১৬৩৩ সালে চার্চ গৃহবন্দী করেছিল। এর আট বছর পর গ্যালিলিও গৃহবন্দী অবস্থায় মারা যান।

* জাকির নায়েক এবার বলেন, ডারউইন বেঁচে থাকাকালীন অন্য বিজ্ঞানীরা বিবর্তনবাদকে সমর্থন করেছিল। এই সমর্থন করার কারণ ছিল, তত্ত্বটি বাইবেলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাচ্ছে। কিন্তু তত্ত্বটি সত্য না মিথ্যা তা বিজ্ঞানীরা যাচাই করতে যাননি। প্রকৃতপক্ষে ডারউইনের জীবদ্দশায় তো নয়ই তিনি মারা যাওয়ার দীর্ঘকাল পরে বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বটি গ্রহণ করতে শুরু করে।

*জাকির নায়েক বলেন, ডারউইন মানুষের বিবর্তন বোঝাতে চার প্রজাতির হোমিনাইটদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে- ডারউইনের আলোচনায় হোমিনাইট নামের কিছু ছিল না। ডারউইন আসলে হোমোনয়েডদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। ডারউনের মতে, এদের সংখ্যা চার নয় চৌদ্দ প্রজাতির।

*জাকির নায়েক বলেন, এই হোমোনয়েডদের একটি হচ্ছে ডসনোফাইটিকেস্ট। ডসনোফাইটিকেস্ট তিন দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ওই সময়টাকে বরফ যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সত্য হচ্ছে- কোন প্রজাতির হোমনয়েডকেই এই ধরণের নামে নামকরণ করা হয়নি। এছাড়া জাকির নায়েক যেমন বলেছেন- বরফ যুগ বা আইস এজ তিন দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে এসেছিল তা সঠিক নয়, বরফ যুগ এসেছিল এক দশমিক ছয় মিলিয়ন বছর আগে।

*জাকির নায়েক বলেন, ডসনোফাইটিকেস্টদের পরই পৃথিবীতে হোমো সেপিয়েন্সদের আবির্ভাব হয়। এরা আবার ৫ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- হোমো সেপিয়েন্স বলতে আসলে আধুনিক মানুষকেই বোঝান হয়। জাকির নায়েক নিজেও হোমো সেপিয়েন্স। অথচ জাকির নায়েক বলছেন, হোমো সেপিয়েন্স বিলুপ্ত হয়ে গেছে পাঁচ লাখ বছর আগে।

* জাকির নায়েক বলেন, হোমো সেপিয়েন্সদের পরপরই আবির্ভাব হয় নিয়ানডার্থালদের। এরা এক লাখ চল্লিশ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- নিয়ানডার্থালরা ৩০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছে।

* জাকির নায়েক বলেন, নিয়ানডার্থালদের বিলুপ্তির পরপরই মানুষের বিবর্তনের চতুর্থ ধারায় ক্রোম্যাগননরা আবির্ভূত হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- ক্রোমেগনন বলতে আলাদা কিছু নাই। ক্রোম্যাগনন বলতে আসলে হোমো সেপিয়েন্সদেরকেই বোঝান হয়।

* জাকির নায়েক বলেন, এই স্তরগুলোর মধ্যে কোন ধারাবাহিকতাই নাই। বিবর্তনে কোন ধারাবাহিকতা নাই বলে জাকির নায়েক বারবার বলতে থাকলেও বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে বিবর্তনে ধারাবাহিকতা আছে।

* জাকির নায়েক বলেন, বিজ্ঞামী আলবার্ট গোর্গি ভিটামিন সি উদ্ভাবন করেছিলেন। এই বিজ্ঞানী গর্গি, ডারউইনের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করতে ‘ক্রেজি এপ এন্ড ম্যান’ নামের একটি বই লিখেছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে- বিজ্ঞানী গর্গি ভিটামিন সি উদ্ভাবন করেননি। সত্য হচ্ছে- ‘ভিটামিন সি’ প্রাকৃতিক উপাদান। ভিটামিন সি উদ্ভাবন করা হয়নি, আবিষ্কার করা হয়েছে। আর তিনি ‘ক্রেজি এপ এন্ড ম্যান’ নামের কোন বই লিখেননি। তার বইটির নাম ছিল ‘ক্রেজি এপ’ আর এই বইটি বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে তো নয়ই, এমনকি বইটি বিবর্তনবাদ নিয়েও না। বইটির বিষয় ছিল সমাজবিজ্ঞান।

* জাকির নায়েক বলেন, রুপার্ট এলবার্ট নামের একজন বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিপরীতে আরও একটি তত্ত্ব দেন। অথচ সত্য হচ্ছে- বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন কোন বিজ্ঞানীকেই খুঁজে পাওয়া যায় না।

* জাকির নায়েক বলেন, বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক সেলসব্যারী বলেছেন, ডারউইনের তত্ত্বে বিশ্বাস করাটা অযৌক্তিক। আদতে ফ্র্যাঙ্ক সেলসব্যারী নামের কোন বিজ্ঞানীকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

* জাকির নায়েক বলেন, স্যার হুয়াইটমিট নামের আরেক জন বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে বই লিখেন। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে- স্যার হুয়াইটমিট নামের কোন বিজ্ঞানী নেই, ছিলেনও না।

কৃতজ্ঞতা: নতুন দিন ডটকম
দেখতে পারেন এখানেও : http://www.notun-din.com/?p=11276

স্বামীবাগ ইস্কন মন্দিরে মুসল্লিদের সহিংস হামলা


গতকাল সোমবার রাতে স্বামীবাগ ইস্কন মন্দিরে দেড় শতাধিক মুসল্লি হামলা করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হিন্দুবার্তার নিজস্ব প্রতিনিধি জানায়, রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। তারাবীর নামাজ শেষ করে মুসল্লিরা মন্দিরে দলবদ্ধভাবে হামলা করে। হামলার পরপরই মন্দিরের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। শতাধিক মুসল্লি মন্দিরের প্রাচীরের বাইরে থেকে ভেতরে ইট-পাথর ছুড়ে মারে। এতে মন্দিরের জলের ট্যাংকসহ বেশকিছু স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা মন্দিরের গেইটে লাথির পর লাথি মারে আর অশ্রাব্য ও জিহাদী ভাষায় হিন্দুদের ও মন্দিরের নামে গালিগালাজ করে।



মন্দিরের ভক্তদের অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল। তাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তোলেন। তবে পরবর্তীতে অধিক সংখ্যক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের পর রাত বারটার মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

হামলাকারী মুসল্লিদের দাবি তাদের নামাজের সময় মন্দিরের অনুষ্ঠানের শব্দ মাইকে সাউন্ড দিয়ে বাজানো হয়েছে। তবে মন্দিরে উপস্থিত ভক্তবৃন্দ হিন্দুবার্তাকে জানান, সন্ধ্যার পর থেকেই মন্দিরের কোন সংকীর্ত্তন বা অনুষ্ঠান মাইকে বাজানো হয়নি। তারা জানান, আমরা হিন্দুরা চিরকালই সকল ধর্মের সহাবস্থান ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এদেশে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের নামাজে বিঘ্ন ঘটিয়ে মন্দিরে মাইক বাজানো হবে এমন কথা কোন হিন্দু কল্পনাও করে না। এমতাবস্থায় মুসল্লিদের অভিযোগ একান্তই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে দ্যা বাংলাদেশ হেরাল্ড নামের একটি অখ্যাত অনলাইন পত্রিকা উক্ত ঘটনায় হিন্দুদেরকে দোষী করে চরম বিকৃত ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক একটি সংবাদ পরিবেশন করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হিন্দুবার্তা প্রতিনিধি জানায় সংবাদটির নিরানব্বই ভাগই মিথ্যা ও বিকৃত। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে সংবাদটি হুবহু এখানে প্রকাশ করা হলো।

“তারাবীর নামাজে বাধা, মন্দিরের রথযাত্রি এবং মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষ : মসজিদে তারা ঝুলানোর হুমকি পুলিশের”

বিডি হেরাল্ডঃ তারাবীর নামাযে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামীবাগ মন্দিরের রথযাত্রি এবং মসজিদের মুসল্লিদের মদ্ধে সংঘর্ষ হয়। মন্দিরের হিন্দু ধর্মাাবলম্বিদের ইটের আঘাতে এক মুসল্লির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

৮২ নং স্বামীবাগে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘স্বামীবাগ জামে মসজিদ’ অপরদিকে ‘স্বামীবাগ মন্দির’ রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি প্রধান হিন্দু মন্দির।

অনুসন্ধানে জানা যায় মসজিদ এবং মন্দির দুটি পাশাপাশি অবস্থিত হয়ার কারনে ইবাদতে বিঘ্ন হওয়ার কারনে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানিয় হিন্দু সম্প্রদায় এবং মসজিদের মুসল্লিরা একপক্ষ অন্য পক্ষকে দোষারোপ করছিল।

মন্দিরের পক্ষ থেকে ৭ দিনব্যাপী রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। স্থানিয় মুসল্লিরা দবি করেন এই রথযাত্রার বাদ্য বাজনার কারনে তাদের ইবাদতে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য মসজিদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়নি।

অপর দিকে আজ রথযাত্রায় অসুবিধার কারনে তারাবির নামাজ চলাকালে মন্দিরের পক্ষ থেকে নামাজ রাত ১০টার মধ্যে শেষ করবার জন্য চাপ দেওয়া হয় মসজিদ কতৃপক্ষকে। কিন্তু তারাবির নামাজ দাবি মোতাবেক যথাসময়ে শেষ না করার কারনে মসজিদের মুসল্লিদের ঢিল ছোড়া শুরু করে মন্দিরের পক্ষথেকে। এসময় মসজিদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলে মন্দির থেকে একদল লোক দা, লাঠি নিয়ে বের হয়ে মুসল্লিদের ধাওয়া করে। এসময় একজন মুসল্লি ইটের আঘাতে মারাত্মকভাবে যখম হয়।

কিন্তু ঘটয়ার পরপর ঘটনাস্থলে গেণ্ডারিয়া থানার এসআই অমল কৃষ্ণ উপস্থিত হয়। এবং মসজিদের ইমাম সাহেবকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালান। এসময় উপস্থিত মসজিদের মুসল্লিগন এবং মসজিদ কমিটির লোকজনের হস্তক্ষেপে ইমাম কে ছেড়ে দেন এসআই অমল কৃষ্ণ। মসজিদ কমিটির সভাপতি মহাম্মাদ সিরাজ বিডিহেরাল্ড কে জানান ‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে তারাবির নামাজ রাত ১০টার মধ্যেই শেষ করতে করতে হবে। অন্যথায় মন্দিরের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার কারনে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। ” বলে হুমকি দেন গেন্ডারিয়া থানার এসআই অমল কৃষ্ণ।

এসময় মসজিদ কমিটির সভাপতি এসআই অমল কৃষ্ণের কাছে তারাবির নামাজ কিভাবে দ্রুত শেষ করব জানতে চাইলে এসআই অমল কৃষ্ণ দ্রুত পড়ে তারাবির নামাজ সেশ করবেন করবেন বলে জানান।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯ গাড়ি দাঙ্গা পুলিশ এসে এখন পুরো ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানিয় অনেক মুসল্লিরা তাদের বাসায় ফিরতে না পেরে আশেপাশের মসজিদে অবস্থান করছে বলে রাত ১টা ৪০ মিনিটে পর্যন্ত জানা যায়। বিশ্বস্ত সুত্র থেকে জানা যায় ঢাকা ৬ আসন এর সংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ বর্তমানে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।

এ সময় কাজী ফিরোজ রশিদএর উপস্থিতেই মন্দিরের ভিতর থেকে শ্লোগান দিতে থাকে “মন্দিরে হামলা কেন,বিচার চাই। মসজিদে হামলা দেও!”

Saturday, June 21, 2014

জাকির নায়েকের মিথ্যাচার :হিন্দুধর্মে বহুবিবাহ অনুমোদিত


জাকির নায়েকসহ ইসলামিক ও অন্যান্য ধর্মের অনেক অপপ্রচারকারীরাই নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য দাবী করে যে হিন্দুধর্মে বহুবিবাহ অনুমোদিত।এর মাধ্যমে তাদের নিজেদের ধর্মগুলোতে বহুবিবাহের অনুমোদনের পক্ষে একটি সমর্থন পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় তারা।প্রকৃত সত্য দেখে নেয়া যাক।

ঋগবেদ এর তিনটি মন্ত্র যথাক্রমে ১.২৪.৭,৪.৩.২ ও ১০.৭১.৪ এ বলা হয়েছে "যায়েব পত্য উষতে সুভাসহ অর্থাত্‍ যেভাবে জ্ঞানীগন জ্ঞানপ্রাপ্ত হন ঠিক সেভাবে একক পতি-পত্নীযুক্ত সংসার আনন্দ ও সুখ লাভ করে।

ঋগবেদ ১০.৮৫.২৩ এ বলা হয়েছে স্বামী ও স্ত্রীর সবসময় উচিত পুনরায় বিয়ে না করার ব্যপারে সংযমী হওয়া।

অথর্ববেদ ৭.৩৮.৪ বলেছে "স্বামীর উচিত শুধু একমাত্র স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত থাকা।দ্বিতীয় কোন নারীর প্রতি অনুরাগ তো দুরে থাক,অন্যকোন নারী সম্বন্ধে তার আলোচনাও করা উচিত নয়।"
বহুবিবাহ নিষিদ্ধের এর চেয়ে স্পষ্ট নিদর্শন আর কি থাকতে পারে!

ঋগবেদ ১০.১০৫.৮ বলেছে যে একাধিক স্ত্রীর অস্তিত্ব মানেই জাগতিক সকল দুঃখের আনায়ন।

ঋগবেদ ১০.১০১.১১ বলেছে দুই স্ত্রীযুক্ত ব্যক্তিকে সেভাবেই কাঁদতে হয় ঠিক যেভাবে চলমান রথের ঘোড়া উভয় দিক থেকে চাবুক এর আঘাতে হ্রেষা রব করে!

ঋগবেদ ১০.১০১.১১ এও বলেছে যে একাধিক স্ত্রী জীবনকে লক্ষহীন করে তোলে।

অথর্ববেদ ৩.১৮.২ বলেছে একজন নারীর কখনো যেন কোন সতীন(Co-wife) না হয়।

এখন আসা যাক জাকির নায়েক এর দ্বিতীয় ভন্ডামী যুক্তি যা তিনি দিয়েছেন যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ও অতুলনীয় শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে।তিনি দাবী করেছেন যে মহাভারত অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীসংখ্যা নাকি ১৬১০৮ এবং শ্রীকৃষ্ণ যদি বহুবিবাহ করতে পারে তাহলে সাধারন হিন্দুদের সমস্যা কি!
উত্তরে বলা যেতে পারে যে সব জায়গায় ইসলামিক তাকিয়ার ভন্ডামী চলেনা জাকির সাহেব!শ্রীকৃষ্ণের বহুবিবাহের এই ভূল তথ্যটি পাওয়া যায় দুইভাই জয়দেব এর লেখা গীতগোবিন্দ ও বোপদেব এর লেখা ভাগবতাম নামক একটি গ্রন্থে যা কোনভাবেই বৈদিক কোন গ্রন্থ নয় এবং শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সম্বন্ধে একমাত্র গ্রহনযোগ্য গ্রন্থ ব্যসদেব এর মহাভারত।সেই ব্যসদেব মহাভারতে তাঁর সম্বন্ধে কি লেখা আছে দেখা যাক-
"শ্রীকৃষ্ণের একমাত্র স্ত্রী ছিলেন রুক্সিনীদেবী যিনি ছিলেন পরম ধার্মিক,বিদূষী ও পতিব্রতা।সন্তান জন্মদানের পূর্বে তাঁরা উভয়েই বদরিকাশ্রমে যান ও দীর্ঘ বারবছর কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করেন।এরপর রুক্সিনীদেবী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন যার নাম রাখা হয় প্রদ্যুম্ন।"
[ব্যসকৃত মহাভারত,সৌপ্তিকাপর্ব, ২/২৯-৩০,তথ্যসূত্র- শ্রীকৃষ্ণের জীবনী নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ৩৬ বছরের সুদীর্ঘ গবেষনালব্ধ ফলাফল]

এখন আসা যাক শ্রীরামচন্দ্রের ব্যপারে তার দাবী নিয়ে।অজ্ঞ জাকির দাবী করেছেন যে যেহেতু শ্রীরামচন্দ্রের পিতা রাজা দশরথ চারটি বিয়ে করেছিলেন সেহেতু হিন্দুধর্মে চারটি বিয়ে অনুমোদিত!এক্ষনে প্রমানিত হল যে হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে জাকিরের নূন্যতম জ্ঞান ও নেই!
রামায়ন ও মহাভারতকে বলা হয় হিন্দুধর্মের প্রামান্য ধর্মশাস্ত্র অর্থাত্‍ এই দুটি শাস্ত্রে বর্ণিত ঘটনা ও তাদের ফলাফলগুলোকে পর্যবেক্ষন করে একজন হিন্দু তার জীবনবিধি সম্বন্ধে দিকনির্দেশনা পেতে পারে।বেদে যেসকল জীবনবিধি দেয়া হয়েছে সেগুলো মানা বা না মানার বাস্তব ফলাফল প্রতিফলিত হয়েছে এই গ্রন্থ দুটিতে।

রাজা দশরথের ক্ষেত্রে কি দেখতে পাই?অলঙ্ঘনীয় বেদ নির্দেশিত এককবিবাহ না মেনে তিনি একাধিক বিয়ে করেন আর ফলশ্রুতিতে দুঃখময় অকালমৃত্যু,ছেলের বনবাস,রাজ্যময় শোক এর মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।এ থেকে একজন হিন্দু বুঝতে পারেন যে বেদে বহুবিবাহের নিষেধাজ্ঞা কতটা যুক্তিসংগত!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে আপনারা সকলেই জানেন যে বহুবিবাহের ক্ষতিকর দিকের শেষ নেই।জনসংখ্যা বিস্ফোরন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা,সেক্স ট্রান্সমিটেড ও কমুনিকেবল ডিসিস এর প্রাদুর্ভাবসহ অসংখ্য ক্ষতিকর প্রভাব আছে এর।বর্তমান যুগে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা রোধে যেখানে সভ্য দেশগুলো বহুবিবাহকে নিরুত্‍সাহিত করছে সেখানে এইসব অজ্ঞ ও উগ্র ধর্মান্ধরা তাদের মধ্যযুগীয় এ বর্বর সভ্যতাকে অন্যদের উপর চাপানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!

ভারত সরকার এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ১৯৫৪ সালে আইন করে হিন্দুদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করে।সুতরাং এইসব ভন্ডদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান।ছড়িয়ে দিন বৈদিক সত্যের এই বানীকে।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

Friday, March 7, 2014

মনুসংহিতায় নারীর মর্যাদা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

প্রশ্ন: ৪২ উত্তর: অনেকে অভিযোগ করেন, মনুসংহিতা সামগ্রিকরূপে একটি নারীবিরোধী শাস্ত্র। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, পণ্ডিত ও বিদ্বান সমাজ একথা বহুবার স্বীকার করেছেন যে, মনুসংহিতা নামক স্মৃতিশাস্ত্রটি তে বহু প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। এর মানে এই যে, জাতিগত বা সময়গত বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে এই পবিত্র গ্রন্থটিতে অনেক কাঁটাছেঁড়া করা হয়েছে। শ্লোক রচনার গঠন রীতির আধুনিকতা ও প্রাচীনতা বিবেচনা করে এই জাল শ্লোকগুলো আলাদা করা খুব কঠিন কিছু নয়। আদি মনুসংহিতা শাস্ত্রটি অধ্যয়ন করলে যে কেউ গর্বভরে দাবি করতে পারবেন যে, পৃথিবীতে নারীকে মর্যাদা দানে মহর্ষি মনুর মতো এতো চমৎকার সব বিধান আর কোন ধর্মনেতা কোন কালেই প্রদান করেননি। এমনকি মনুসংহিতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হলে অনেক ক্ষেত্রে আধুনিক নারীবাদীদের চিন্তাধারারও উন্নয়নের প্রয়োজন। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে মনুস্মৃতির আলোকে বিষয়টা আলোচনা করা হলো। আমরা এখন এমন একটি শ্লোক পড়ব যার অর্থ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে নারীরাই হচ্ছে কোন উন্নত সমাজের ভিত্তিস্বরূপ। এটি মনুসংহিতার তৃতীয় অধ্যায়ের (ধর্মসংস্কার প্রকরণ) শ্লোকঃ যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলা ঃ ক্রিয়াঃ।। (মনুসংহিতা ৩/৫৬) অর্থাৎ “যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।” এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যারা মনুস্মৃতিকে দোষারোপ করেন, তারা কখনোই এই শ্লোকের উদ্ধৃতি দেন না। উদ্দেশ্যপ্রণোদি তভাবে শুধুমাত্র হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কুৎসা প্রচারই তাদের একমাত্র কাজ। নিরপেক্ষ বিচার তাদের কাছে নেই। যেমন নিচের চমৎকার শ্লোকগুলোর কথা কোন ব্লগার বা হিন্দুধর্মের সমালোচক উল্লেখ করেন না: “একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রাতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন”। (মনুসংহিতা ৩/৫৫) “যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭) ভেবে দেখুন, পরিবারের সুখ- শান্তি-সমৃদ ্ধির জন্য এর চেয়ে বড় কথা আর কি হতে পারে? এখানে পুরুষতান্ত্রিকত া চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। নারীকে সর্বদা সুখী রাখতে হবে - এটাই মহর্ষি মনুর নির্দেশ। “যে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে তার সমগ্র পরিবারের জন্য দুর্দশা বয়ে আনে। আর যদি স্ত্রী পরিবারের প্রতি সুখী থাকেন, তবে সমগ্র পরিবার শোভাময় হয়ে থাকে।” (মনুসংহিতা ৩/৬২) “যে বংশকে উদ্দেশ্য করে ভগিনী, পত্নী, পুত্রবধূ প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা অনাদৃত, অপমানিত বা বৈষম্যের শিকার হয়ে অভিশাপ দেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় ধন-পশু প্রভৃতির সাথে সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।” (মনুসংহিতা ৩/৫৮) পুরুষতান্ত্রিক যে সমাজে নারীনির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, নারীকে যথেচ্ছা সম্ভোগ, প্রহার বা তাড়িয়ে দেওয়ার বিধানও যে সমাজ অনুমোদন করে, সেই সমাজ যে ক্রমেই বিনাশপ্রাপ্ত হবে - এটাই তো স্বাভাবিক। বিশ্বের প্রতিটি নারীর ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের লক্ষ্যে, নারীর অপমান ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহর্ষি মনু যে দৃপ্ত বাণী উচ্চারণ করেছেন, তাতে তো মনুকে বরং কট্টর নারীবাদী বলেই মনে হয়, তাই না? “যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন দ্বারা খুশী রাখবে এবং উত্তম অলংকার, পোশাক ও খাদ্যদ্বারা প্রীত রাখবে। স্ত্রীজাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে।” (মনুসংহিতা ৩/৫৯) শ্লোকটিকে খুব নারীবাদী মনে হতে পারে, তবে মহর্ষি মনু মোটেও পুরুষতান্ত্রিক বা নারীবাদী কোনটাই নন, তিনি মানবতাবাদী। মনে রাখবেন ‘মনু’ শব্দ থেকেই ‘মানব’ ও ‘মানবতা’ শব্দের উৎপত্তি। “স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে থাকে। তারা নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তারাই গৃহের শ্রী।” (মনুসংহিতা ৯/২৬) আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ‘ভাগ্যশ্রী’, ‘ঘরের লক্ষ্মী’ বা ‘গৃহলক্ষ্মী’ বলা হয়। “প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে স্ত্রীরাই সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উত্পাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়ে থাকে।” (মনুসংহিতা ৯/২৮) অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উত্স বলে মহর্ষি মনু প্রতিপাদন করেছেন। “পতি ও পত্নী মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে থাকবেন। তারা অন্য কোন জীবনসঙ্গী গ্রহণ করবেন না বা ব্যাভিচার করবেন না। এই হলো নারী-পুরুষের পরম ধর্ম।” (মনুসংহিতা ৯/১০১) “নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ৯/৯৬) এই শ্লোকটির কথা একবার ভেবে দেখুন। নারী ছাড়া পুরুষ অসম্পূর্ণ একথা শুধুমাত্র হিন্দুধর্মই বলে থাকে। নারী ছাড়া পুরুষের ধর্মকর্ম সম্পূর্ণ হয় না। বৈদিক যজ্ঞ ও ধর্মপালন স্বামী- স্ত্রী যুগ্মভাবে করতে হয়, কেউ একাকী করতে পারেন না। একারণেই নারীকে বলা হয় পুরুষের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ও ‘সহধর্মিনী’। উল্লেখ্য, মনুসংহিতাই একমাত্র ধর্মশাস্ত্র যেখানে এই বিখ্যাত কথা দুইটি অনুমোদন করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই হিন্দুধর্মে বিবাহবিচ্ছেদ এবং বহুবিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, অন্য ধর্মে নারী পুরুষের অর্ধাঙ্গিনীও নয়, সহধর্মিনীও নয়। এই কথা মানতে নারাজ হলে একটি মাত্র দৃষ্টান্ত দিচ্ছি- মসজিদে নারী-পুরুষ কি একসাথে নামাজ পড়া সম্ভব? এমনকি নিজ গৃহেও স্বামী- স্ত্রী কি একসাথে নামাজ পড়তে পারেন? স্বয়ং বিবেচনা করুন। এবার নারীদের স্বাতন্ত্রের কথায় আসা যাক। স্মর্তব্য, স্বাধীনতা মানে উচ্ছৃঙ্খলা নয়, স্বাতন্ত্র্য মানেই ঔদ্ধত্য নয়। “যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে ‘অরক্ষিতা’ থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা- আপনি আত্মরক্ষায় তত্পর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা ‘সুরক্ষিতা’ হয়ে থাকে। তাই স্ত্রীলোকদের আটকে রাখা নিষ্ফল। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব সামর্থ্য ও মনোভাবের উপর নির্ভরশীল।” (মনুসংহিতা ৯/১২) এই শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নিরাপত্তার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখা নিষ্ফল। বিপরীতক্রমে তাকে নিরাপদ রাখতে হলে তাকে অধিকার দিতে হবে এবং সঠিক শিক্ষা- দীক্ষা প্রদান করতে হবে। নারীর সামর্থ্য ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করতে হবে, মানবিক বিকাশ সাধনে তৎপর হতে হবে, যার ফলশ্রুতিতে তারা যেন আত্মরক্ষায় তৎপর থাকেন, নিজেদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। নারী জাতি সম্পর্কে এই হলো মহর্ষি মনুর মতাদর্শ। “নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩২৩) “যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৯/২৩২) “যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।” (মনুসংহিতা ৮/৩৫২) ইভটিজিং এখন প্রধান একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে, যার বিরুদ্ধে কঠোর কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। কিন্তু ইভটিজিং, অপহরণ ও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান কিন্তু সেই মনুর যুগ থেকেই প্রচলিত ছিল। “যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৮/২৭৫) অথচ নারীকে এই মিথ্যা দোষারোপ করেই প্রতিবছর হাজার হাজার নারীকে ‘অনার কিলিং’ করা হয়। অর্থাৎ হিন্দুধর্মের বিপরীত বিধানও অনেক সমাজে প্রচলিত আছে। “যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩৮৯) ভেবে দেখুন, পথে- ঘাটে যত অনাথ শিশু দেখেন, যত নিশিকন্যা দেখেন, যত পিতৃ-মাতৃতুল্য বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে হাত পেতে ভিক্ষা করতে দেখেন, তাদের মাঝে কতজনকে আপনি হিন্দু দেখেছেন? হিন্দুদের মানবিক মূল্যবোধ অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয় কি? নিজেই বিচার করুন। “যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন।” (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯) অর্থাৎ নারীর নিরাপত্তা বিধান ও অধিকার সংরক্ষণে দেশের সরকারকেও সদা তৎপর থাকতে হবে। “নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে।” (মনুসংহিতা ৩/১১৪) “বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য।” (মনুসংহিতা ২/১৩৮) এই মানবিক ভদ্রতা জ্ঞানটুকু আর কোন শাস্ত্রে আছে? Ladies First তত্ত্বটা কিন্তু তাহলে বিদেশী নয়, বরং ভারতীয় রীতি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

Friday, February 21, 2014

◄○কলিযুগ○►

কলিযুগের ব্যাপ্তিকাল ৪লক্ষ ৩২হাজার বছর । খ্রীস্টপূর্ব ৩১০১ এ কলিযুগের আরম্ভ হয় । বর্তমানে এযুগের ৫১১৩ বছর চলছে । দ্বাপরের অবসানে ব্রহ্মার পৃষ্ঠদেশ হতে অধর্মের সৃষ্টি হয় । কলিযুগের অবতার সমূহ- •১→ বুদ্ধ অবতার । আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে জন্মগ্রহন করেন । •২→ কল্কি অবতার । (কল্কি অবতার কলিযুগের অন্তে মানে শেষের দিকে আর্বিভাব ঘটবে ।শম্ভল গ্রামে (মোরাদাবাদ জেলায় ) সুমতি নামে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে , বিষ্ণুযশা নামে ব্রাহ্মণের বাড়িতে , কল্কি নামে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতারের আর্বিভাব ঘটবে । কল্কি হবে বিষ্ণুযশা-সুমতির চতুর্থ সন্তান । বিষ্ণুযশা-সুমতির প্রথম তিন সন্তানের নাম হবে যথাক্রমে কবি, প্রাজ্ঞ আর সুমন্তক ।) ▓ কলিযুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ ▓ ☯ কলিযুগের তিনপাদ অর্থাত্‍ চারভাগের তিন ভাগ অধর্ম ও একপাদ বা চারভাগের একভাগ মাত্র ধর্ম পালন করে । ☯ কলিযুগের আয়ুষ্কাল ১০০বছর। ☯ মহারাজ পরীক্ষিতের সময় কলিযুগের শুরু হয়। ☯ ভাগবতে বলা আছে ছলনা মিথ্যা আলস্য নিদ্রা হিংসা দুঃখ শোক ভয় দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট। ☯ বিষ্ণু পুরাণ মতে কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে বেশী গর্ব করবে ।ধর্মের জন্য অর্থ খচর করবে না । ☯ ধর্মগ্রন্থের প্রতি মানুষের আর্কষন থাকবে না । ☯ মাতাপিতাকে মানবে না । পুত্র পিতৃহত্যা বা পিতা পুত্র হত্যা করতে কুন্ঠিত হবে না । ☯ কলিযুগের প্রধান গুন হচ্ছে মানুষ কম পরিশ্রমে বেশী পূণ্য অর্জন করবে । ☯ দান করাই হবে কলিযুগের শ্রেষ্ঠ ধর্ম । ☯ চৈতন্য মহাপ্রভুর মতে হরিনাম সংকীর্তনই হবে কলিযুগের একমাত্র ধর্ম । ☯ বিষ্ণু পুরাণ (৬/১/৮) এর মতে- • মানুষ বৈদিক ক্রিয়া আচার সমূহ করবে না । • ধর্মানুসারে কেউ বিবাহিত থাকবে না । • স্ত্রীলোকরা কেবল চুলের বাহদুরী করেই নিজেকে সুন্দরী বলে মনে করবে । • ধনহীন পতিকে স্ত্রীরা ত্যাগ করবে । আর ধনবান পুরুষরা সেই স্ত্রীগণের স্বামী হবে ।। • কলিযুগে ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবে । • মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবে । • কলিযুগে নারীরা সাধারনতঃ স্বেচ্ছাচারিণী ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবে এবং পুরুষরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবে । • সুহ্বদদের প্রার্থনাতে মানুষ নিজের অনুমাত্র স্বার্থ পরিত্যাগ করবেনা । • অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর দুর্ভিক্ষ ও ক্লেশ ভোগ করবে । • কলিকালে মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে । • কলিকালে স্ত্রীলোকরা নিতান্তই লোভী হবে , বহু ভোজনশীল হবে । • স্ত্রীরা দুহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অনায়াসে পতি আজ্ঞা অবহেলা করবে । নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবে , নিরন্তন কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবে । • আচারহীন ব্রাহ্মণপুত্ররা ব্রহ্মচারীর বেশ ধারন বেদ অধ্যয়ন করবে । • গৃস্থরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন । • মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবে । • কলি কালে ৮থেকে ১০বছরের বালকেরা সহবাসে ৫থেকে ৭বছর বয়সের বালিকারা সন্তান প্রসব করবে । • মানুষ সর্বোচ্চ ২০ বছর বাঁচবে । • কলিকালে মানুষের বুদ্ধি অতি অল্প ,তাঁদের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি অতিশয় কুত্‍ সিত ,তাদের অন্তকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে । আর অল্প কালেই বিনাশ লাভ করবে । • • যখন পাষন্ড লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে , তখন সমাজের ভালো লোক কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবে না । সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে । • অল্প বৃষ্টি হবে, কলিকালে ফসল কম হবে । • কলিকালে মানুষ শ্বশুরের অনুগত হয়ে, কার মাতা কার পিতা এরকম কথা বলবে । • সুন্দরী স্ত্রী যার তার সাথে বন্ধুত্ব হবে , নিজ ভাইয়ের সাথে শত্রুভাব পোষন করবে ।

Monday, February 17, 2014

একাদশী ব্রত পালনের উপকারিতা

>1<একাদশী ব্রত পালনের উপকারিতা# >শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তার লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই একাদশীর উপবাসের প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন।শ্রীল জীব গোস্বামী তার ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্দ পুরাণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন,যে মানুষ একাদশীর দিন পঞ্চশষ্য আহার করে,সে সেই খাদ্যের সাথে সাথে তার পিতা,মাতা,ভাই,আত্নীয় স্বজন,ব্রাক্ষ্মণ এমনকি গুরু হত্যার পাপও ভক্ষন করে।যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয়,তবুও তার অধঃপতন হয়।একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয়,এমনকি অন্ন এবং ডালও,কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,সে দিন বিষ্ণুর প্রসাদ পর্যন্ত গ্রহন করা উচিত নয়।যে কোনো রকমের শস্যদানা এমনকি অন্ন-তা যদি বিষ্ণু প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহন করা কঠোর ভাবে নিষেদ করা হয়েছে। **>বিধবা না হলেও শাস্ত্র অনুসারে একাদশীর ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করেছিলেন।[দ্রষ্ঠব্য=শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত"আদিলীল া{15/8-10}।ভক্তি সহকারে একাদশী পালন করলে সকল যজ্ঞ ও সকল প্রকার ব্রতের ফল লাভ হয়।একাদশীর সময় করণীয়>রাত্রী জাগরন,বেশী বেশী করে হরিকথা শ্রবন। এবং যা যা নিষিদ্ধ>পরনিন্দা,পরচর্চা,মিথ্য াকথা,ক্রোধ,দুরাচারী দর্শন একদম নিষিদ্ধ। একাদশীতে ধান,গম,যব,ভূট্রা ও সরিষা জাতীয় যাবতীয় খাদ্য বর্জনীয়।তাই আসুন আমরা আর সংসার জীবের মানুষ আর কিছু না পারি,অন্তত এই একদিন একাদশী ব্রত পালন করার চেষ্ঠা করি। আমাদের উক্ত POST টি ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করুন।

একাদশী কি ভাবে পালন করবেন?

১.সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন। ২.তা হতে ও অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার। ৩.যদি উহাতেও অসমর্থ হন একাদশীতে পঞ্চরবিশষ্য বর্জ্জন করতঃ ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রহিয়াছে। সমর্থ পক্ষে রাত্রি জাগরনের বিধি আছে গৌড়ীয় ধারায় বা মহান আচার্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেগুলি সেমতে করলে সর্বোত্তম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু সবজি ফল মূলাদি গ্রহণ করতে পারেন। যেমন – গোল আলু, মিষ্টি আলু ও চাল কুমড়া, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তৈল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। হলুদ, লবন ও মরিচ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহার্য যেমন – দুধ, কলা,আপেল, আঙ্গুর, আনারস,আখ,আমড়া, শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু, বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফল মূলাদিপেতে পারেন। স্মরণীয় একাদশীতে পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হইয়াছেঃ ১. ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস,খিচুড়ি, চাউলের পিঠা, খৈ ইত্যাদি। ২. গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা,ময়দা,সুজি, বেকারীর রুটি বা সকল প্রকার বিস্কুট, হরলিকস জাতীয় ইত্যাদি। ৩. যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি। ৪. ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – মুগ, মাসকলাই, খেসারী, মশরী, ছোলা, অড়হর,ফেলন, বরবটী ও শিম ইত্যাদি। ৫. সরিষা তৈল, সয়াবিন তৈল, তিল তৈল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশষ্য যে কোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হবে। উল্লেখ্য যারা সাত্তি¡ক আহাড়ী নন এবং চা, বিড়ি/ সিগারেট, পান, কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন একাদশী ব্রত পালনের সময় কাল পর্যন্ত ঐগুলি গ্রহণ না করাই ভাল। একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজের জীবনের সদ্গতি হবে তা নয় একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা/ মাতা নিজ কর্মদোষে নরকবাসী হন তবে সেই পুত্রই (একাদশী ব্রত) পিতা মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে। “ইন্দ্রিরা একাদশী” আশ্বিনের কৃষ্ণা একাদশীর নাম। যদি কেহ কোন বিধি নিষেধ পালন ছাড়া একাদশীর করার উদ্দেশ্যহীন ভাবে (বাধ্যতামূলক) তিথিতে উপবাস থাকে ও রাত্রি জাগরন করে তবে সে একাদশীর সম্পূর্ণ ফল পাবে। একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নিজে নরকবাসী হবে অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে। কাজেই একাদশী পালন করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। একাদশী পারণ – পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের যে সময় দেওয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশষ্য ভগবানের নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্তদরকার। নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হয় না। একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীর দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

প্রশ্নঃ নমস্কার কি? নমস্কার কি সকলকে জানানো যায়? নমস্কার জানাতে হাত জোড় করা হয় কেন?

প্রশ্নঃ নমস্কার কি? নমস্কার কি সকলকে জানানো যায়? নমস্কার জানাতে হাত জোড় করা হয় কেন? (শেয়ার করে অন্যদের জানতে সাহায্য করুন) উত্তর্ঃ ১>নমস্কার বা নমস্তুতেবাঃ সংক্ষেপে নমস্তে হচ্ছে বৈদিক হতে প্রচলিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্তৃক ব্যবহৃত অভিবাদনসূচক শব্দ। সাধারণত দুই হাত জোড় করে 'নমস্কার' শব্দটি উচ্চারণ করা হয়ে থাকে বলে একে অঞ্জলি মুদ্রা বা প্রণ বলা হয়। 'নমস্কার' শব্দটি এসেছে মূল সংস্কৃত শব্দ 'নমঃ'থেকে যার আভিধানিক অর্থ সম্মানজ্ঞাপনপূর ্বক অবনত হওয়া। ২>ইদানিং সনাতন ধর্ম বিরোধী নানা কুপ্রচারণার অংশ হিসেবে একশ্রেণীর কুচক্রী মহল প্রচার করে চলেছে যে , যেহেতু,নমস্কার শব্দটি অবনত হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই সাধারণ জনগণকে নমস্কার জানানো উচিত নয় । দেখা যাক,এ সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে ! "যো দেবো অগ্নৌ যো অপসু যো বিশ্বং ভূবনাবিবেশ য ওষধীষু যো বনস্পতি তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ॥"(শ্বেতাশ্ব তর উপনিষদ ২-১৭) "যোগ যেমন পরমাত্মার দর্শনের সাধন বা উপায় ,নমস্কারাদিও অনুরূপ বলিয়া তাঁহাকে নমস্কার জানাই।'' তিনি কিরুপে?তিনি দেব অর্থাত্ পরমাত্মার প্রকাশভাব । তিনি কোথায়? তিনি আছেন অগ্নিতে,জলে,তৃণ - লতাদিতে, অশ্বাথাদি বৃক্ষে,তিনি এই বিশ্বভুবনে অন্তর্যামীরুপে অণুপ্রবিষ্ট হইয়া আছেন।" তাই যখন কাউকে নমস্কার জানানো হয় তখন মূলত সর্বজীবে অন্তর্যামীরুপে অবস্থিত পরমাত্মাকেই প্রণতি নিবেদন করা হয় ,কোন মনুষ্যদেহকে নয় । সুতরাং,নমস্কার সকলকেই জানানো যায়। ৩>দুইহাত জোড় মূলত অহম্ ত্যাগ পূর্বক বিনয়ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃতিভেদে করজোড়ে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায় যেমন দেবতাদের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে সাধকরা মাথার উপরে দু'হাত জোড় করে থাকেআবার কোন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতে নমস্কার জানাতে বুকের বরাবর হাত জোড় করা একই সাথে পরমাত্মাকে প্রণতি ও আয়ুষ্মান (i.e.দীর্ঘায়ু কামনা) -কে নির্দেশ করে। নমস্কার, নমস্ক্রিয়া [ namaskāra, namaskriẏā ] বি. ১. প্রণাম; ২. যুক্তকর কপালে ঠেকিয়ে অভিবাদন। [সং. নমস্ + √ কৃ + অ, নমস্ + √ কৃ + অ + আ]। নমস্কার সবাইকে। আপনারা চাইলে আর ও তথ্য যোগ করতে পারেন।

শিব লিঙ্গ কি এবং কেন ?

শিব পূজা দু'রকম ভাবে হয় । শিব মূর্তি এবং শিব লিঙ্গ। লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন । যেমন-পুংলিঙ্গ, স্ত্রী লিঙ্গ । লিঙ্গ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো সূক্ষ দেহ। এই দেহটিতে যুক্ত আছে পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়,৫টি কর্মেন্দ্রিয় এবং ৫ টি প্রাণ অপান বায়ু ,মন ও বুদ্ধি-মোট ১৭ টি অবয়ব যুক্ত দেহ। সকল সৃষ্টিরই সূক্ষ শরীর আছে। আমাদের যখন মৃত্যু হয় তখন জীবাত্মা সূক্ষ শরীরে বিচরণ করেন এবং পুনরায় দেহ ধারণ করেন। শিব রুদ্র ও মহাদেব এই তিনটি নামই আমাদের মধ্যে বেশি পরিচিত। যে সূক্ষ শরীরকে আমরা লিঙ্গ বলে পূজা করি তা সৃষ্টির সূক্ষ শরীর প্রকৃতিতে বীজ বপনরূপ সূক্ষ বিষয়টিকে দেখানো হয়েছে। যে সূক্ষ শরীরে ১৭ টি গুণ নিয়ে অবস্থা করছেন তার পুনরায় স্থুল দেহ ধারণ অন্যদিকে প্রকৃতিতে অর্থাৎ মাটিতে বীজ বপণ কারণে বীজের সেই সূক্ষ এবং সুপ্ত শক্তিই অংকুরিত হয়ে বৃক্ষাদি শস্যাদি রূপ ফল আমাদের দেন। প্রত্যেক দেব-দেবীর বা সৃষ্টির এরূপ সূক্ষ দেহ আছে, সেই দেহের আহ্ববান করি ঘটে, পটে(ছবিতে), মূর্তিতে। শিবলিঙ্গও তদ্রুপ সৃষ্টির সূক্ষ দেহ। সাকার রূপে এরূপ লিঙ্গ শরীর বা চিহ্ন আমরা সর্বত্রই ব্যবহার করি। যেমন; একটি দেশের পরিচয় বহন করে একটি পতাকা। বিষ্ণুমন্ত্রের যারা অনুসারী তাদের পরিচয় তারা দেন দেহতে তিলক ফোঁটা অঙ্কিত করে। ঘটে আমরা দেবদেবীর পুত্তলী এঁকে দেবতার চিহ্ন বা প্রতীক বসাই। এরূপ দুটি প্রতীক বা লিঙ্গ বা চিহ্ন আমরা পূজায় ব্যবহার করি। একটি শিব লিঙ্গ আরেকটি নারায়ণ শিলা। শিব লিঙ্গের গঠন প্রণালী সহজ হওয়ায় মূর্তি তৈরী থেকে লিঙ্গ পূজায় আমরা আগ্রহী বেশি। মাটি দিয়ে অতি সহজে অল্প সময়ে এ প্রতীক তৈরী করা যায় এবং পূজান্তে বিসর্জনও দেয়া যায়। কিন্তু প্রতীকটির নাম লিঙ্গ দেয়াতে আমাদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি গড়ে উঠেছে যা সত্যিই দু:খজনক। অথচ একই প্রতীক ব্যবহৃত হচ্ছে নারায়ণ পূজায়, তাঁকে নিয়ে এরূপ আচারণ আমরা করি না। বিশেষ করে শিব-এর সঙ্গে সৃষ্টির কার্যক্রম যুক্ত থাকাতে আমরা লিঙ্গ শব্দটিকে একেবারে পার্থিব কাজের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছি। এ বিভ্রান্তি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে এবং আমাদের শিবত্বে উন্নীত হতে হবে।

Tuesday, February 11, 2014

প্রশ্নঃ পড়ার পূর্বে বেদের কোন মন্ত্র পাঠ করতে হয় ?

উত্তরঃ ওঁ মেধাং মে বরুনো দদাতি মেধাগ্নিঃ প্রজাপতিঃ। মেধামিন্দ্রশ্চ বায়ুশ্চ মেধাং ধাতা দদাতি মে স্বাহা।। যজুর্বেদ ৩২.১৫ অনুবাদ- হে প্রকাশমান,প্রজা পালক প্রভু,আমি যেন মেধা প্রাপ্ত হই,মেধাবুদ্ধি ধারন করতে সক্ষম হই। হে সর্বব্যপক পরমাত্মা,আমি যেন চরাচর জগতের সত্য- অসত্য বিচারের বিবেকযোগ্য বুদ্ধি ও মেধা প্রাপ্ত হই।

জাঁকির নায়েকের জঘন্যতম মিথ্যাচারঃ পর্ব ০৩

বেদ সম্বন্ধে সম্পূর্নই অজ্ঞ জাকির নায়েক দাবী করেছে যে বেদ এ 'আল্লাহ' শব্দটি আছে।তাহলে পরোক্ষভাবে সে স্বীকার করে নিল যে দেবভাষা সংস্কৃত সকল ভাষার আদি এবং আরবি ভাষারও উত্পত্তি ওই সংস্কৃত ভাষা থেকেই! মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে পাঠকদের স্মরন করিয়ে দেই আরবীতে 'আল্লাহ' শব্দটি দুইটি অংশ 'Al'(The) এবং 'Ilah'(Subject of worship) নিয়ে গঠিত। ঋগবেদ এ ইলা এবং অলা নামক দুটি শব্দ আছে।জাকির যে মন্ত্রেই এই শব্দদুটো পাচ্ছে সেখানেই ইসলামিক তাকিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রলাপ বকছে যে সঠিকভাবে উচ্চারন করলে তা নাকি আল্লাহ হয়!(নতুন সংস্কৃত উচ্চারন পদ্ধতি আবিস্কার)।আরো মজার বিষয় হল ইলা এবং অলা দুটি আলাদা শব্দ ই কিভাবে একটি নির্দিষ্ট শব্দ(আল্লাহ) নির্দেশ করে? ভন্ড জাকিরের দাবী(অপ্রকৃতিস্থের প্রলাপ) অনুযায়ী ঋগবেদ ২.১.১১,৩.৩০.১০,৯.৬৭.৩০,১.১৩.৩ এই চারটি মন্ত্রে 'আল্লাহ' শব্দটি রয়েছে।মন্ত্রগুলোর সরলার্থ সহ দেখে নেয়া যাক- অলাত্নো বল ইন্দ্র ব্রজো গোঃ পুরা হন্তোর্ভয়োমানো ব্যয়ার। সুঘান পথো অক্ষণোন নিরজে গোঃ পরাবন বাণীঃ পুরুহূতং ধমন্তী।। (ঋগবেদ ৩.৩০.১০) অনুবাদ-হে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের চালনাকারী,শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিদের বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা অবশ্যই তোমার নিকট শাস্তি প্রাপ্ত হয়।সত্ ও সাধুদের জন্য তুমি পথ করেছ সুপ্রশস্ত। স্পষ্টতই যেহেতু সুক্তটি ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে সেহেতু অলা এখানে ইন্দ্রের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইলা সরস্বতী মহী তিস্রো দেবির্ময়োভুবঃ। বহিঃ সীদংত্বস্রিধ।। (ঋগবেদ ১.১৩.৯) অনুবাদ-মাতৃভাষা ¬,মাতৃসভ্যতা ও মাতৃভূমি(ইলা) এইতিন দেবী;তারা যেন কল্যানময়রুপে অন্তঃকরনে অবস্থান নেয় অনন্তকাল। এখানে ইলা মাতৃভূমি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ত্বমগ্নে অদিতির্দেব দাসুসে ত্বং হোত্রা ভারতী বর্ধসেঘিরা। ত্বমিলা ষতহিমাসি দক্ষসি ত্বং বর্ত্রহা বসুপতে সরস্বতী।। (ঋগবেদ ২.১.১১) অনুবাদ-হে প্রকাশমান পরমাত্মা,সকলের আশ্রয়দাতা,আমাদের এই স্তব গ্রহন কর।তুমি এই বর্নিল ঋতুময় মাতৃভূমিকে সম্পদশালী কর,নাশ কর অসত্ এর। এখানে ত্বম-ইলা(তুমি ইলা) অর্থাত্ ইন্দ্রের অপর একটি নাম হিসেবে ইলা ব্যবহৃত হয়েছে। অলায়স্য পরাশুরননশ্য ত্বম পবস্ব দেব সোম। অখুঃ চিদেব দেব সোম।। (ঋগবেদ ৯.৬৭.৩০) অনুবাদ– হে মঙ্গলদায়ক,ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বর,তুমি সাধুলোকের শত্রুদের ধ্বংস কর,অসত্ এর বিনাশ কর। এখানে অলা বলতে সোমকে নির্দেশ করা হচ্ছে। জাকির নায়েকের মতে প্রতিটি সংস্কৃত অভিধান এ ই আল্লাহ শব্দটি আছে এবং এর অর্থ হিসেবে ঈশ্বর দেয়া আছে।সবচেয়ে বিখ্যাত সংস্কৃত অভিধান যা Dr. Monier Williams কর্তৃক লিখিত (A Sanskrit-English Dictionary, Motilal Benarasidass, Delhi,1981) এ আল্লাহ বলে কোন শব্দ নেই।যে কাছাকাছি শব্দগুলো সেখানে আছে তা হল অলা যার অর্থ সেখানে দেয়া 'কাঁকড়াবিছের লেজের হুল", অলাত যার অর্থ দেয়া আছে "কয়লা" এবং আল যার অর্থ দেয়া হয়েছে "বিষাক্ত পোকা থেকে নির্গত তরল বিষ।" অন্যতম বিখ্যাত সংস্কৃত অভিধান (The Student’s Sanskrit-English Dictionary by Vaman Shivaram Apte, Motilal Benarasidass, Delhi, 2005) এ একটি শব্দ আছে যা হল অল্লা যার অর্থ দেয়া হয়েছে "মা"। সুতরাং ইসলামিক অপপ্রচারকদের থেকে সতর্ক থাকুন।

Sunday, February 9, 2014

'শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ' আরবী ভাষায়

শ্রী বাবনারি দাস নামে এক প্যালেস্টিনিয়ান মুসলিম ( পূর্বে ছিলেন এল , ফাতে কমান্ডো , যিনি জার্মানীতে ইসকনে যোগ দেন ) শ্রীল প্রভুপাদের 'শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ' আরবী ভাষায় অনুবাদ করেন ।

মালয়েশিয়ার ডাকটিকেট স্বামী বিবেকানন্দ

মালয়েশিয়ার সরকার এই ডাকটিকেট প্রচলন করেছে ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের প্রধান পার্ষদ স্বামী বিবেকানন্দ জীর আবির্ভাবের সার্ধশতবর্ষে স্বামীজির প্রতি তাদের শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ।

•••জানতে হলে পড়তে হবে 2:

•পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের জগন্নাথ মূর্তিটি নিম কাঠে তৈরি । •রামের শক্তিশালী ধনুক বিশ্বকর্মা তৈরি করে দেন । •মূল ছয়টি রাগের মধ্যে পাঁচটি গেয়েছিলেন শিব । ষষ্ঠটি পার্বতী গেয়েছিলেন । •পরশুরামকে কুঠার প্রদান করেন শিব । •আমাদের ধর্মমতে বীণা আবিস্কার করেন নারদ । •হনুমানের পিতার নাম পবন । •সীতা হরণের সময় মারীচ নামক রাক্ষস সোনার হরিণ সেজে লক্ষ্মনকে সীতার কুটির থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল । •ভীম ও দুর্যোধনকে গদাযুদ্ধ শিখিয়েছিলেন বলরাম । •আমাদের ধর্মমতে সংস্কৃত ভাষা ও দেবনাগরী অক্ষর আবিস্কার করেন দেবী সরস্বতী । •মহাভারত অনুসারে দধীচির ঊরুর হাড় দিয়ে তৈরি হয় শকুনির পাশা । •জতুগৃহ বানিয়ে পান্ডবদের মারবার কথা ভেবেছিল পুরোচন । তথ্যসূত্রঃ গীতাই সর্বোচ্চ গ্রন্থ Gita is the Best Book — wi

মুক্তিযুদ্ধে ২২ লাখের বেশি হিন্দু শহীদ হয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এক লাখ হিন্দু নিধন আমেরিকায় সদ্য প্রকাশিত একটি বই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড়সড় আলোচনার ঝড় তুলেছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যলয়ের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক গ্যারি জে বাস তার সম্প্রতি প্রকাশিত “ দি ব্ল্যাড টেলিগ্রাম : নিক্সন কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটন জেনোসাইড ” বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রায় এক লাখ হিন্দুকে নির্বিচারে খুন করেছিল। তৎকলীন পূর্ব পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। অসহায় ভাবে তখন খুন হয় বিপুল সংখ্যক হিন্দু। নিজেদের স্বার্থের জন্য তখন ভারত ও মার্কিন সরকার চোখ বন্ধ করেছিল বলেও ঐ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলদেশে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলছে তখনই গ্যারি জে বাসের এই বই তুমুল আলোচনা- সমালোচনা র সাইক্লোন বইয়ে দিচ্ছে আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে। আমেরিকায় এ সপ্তাহের শুরুতে বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৪০ বছর আগের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তাকে ঘিরে একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। খবর বর্তমান , পিটিআই ও ওয়াশিংটনের। জে বাস তার বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থেই গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সর্বত্রই টার্গেট করা হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত বাঙালীদের । যুদ্ধের শুরুতেই অসহায় অবস্থায় খুন হয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ হিন্দু । অথচ আশ্চার্যজনকভাবে বিষয়টিকে ছোট করে দেখিয়েছিল সেই সময়ে ভারতের ক্ষমতায় থাকা ইন্দ্রিরা গান্ধির কংগ্রেস সরকার। শুধু তাই নয়, অদ্ভুতভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। এই নিরবতা কেন ? এমন প্রশ্ন তুলেছেন জে বাস তার বইতে। শুধু মার্কিন প্রশাসন নয়, তখনকার ভারত সরকারের তীব্র সমলোচনা করেছেন লেখক জে বাস। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে যখন প্রত্যেকদিন নিয়ম করে হিন্দু নিধন চলছিল তখন ভারত সরকার বিষয়টির আসল গুরুত্ব প্রকাশে রাজি ছিলনা। কারণ, ইন্দিরা গান্ধি সরকার চায়নি তখনকার বিরোধী দল জনসংঘ তথা আজকের বিজেপি এই নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পাক। পাক সেনারা যখন নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে তখন ভারতের সংসদ সদস্যরা গোলাবারুদ দিয়ে হিন্দুদের সাহায্য করেনি। কারণ সেই একটাই, যদি গোলাবারুদ দেওয়া হয় , তাহলে গোটা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসবে। আর তা নিয়ে রাজনীতি করবে জনসংঘ বা বিজেপি। বইয়ে তিনি আরো লিখেছেন, তখন পাকিস্তানী জেনরেল ইয়াহিয়ার হিন্দু নিধনের পক্ষে যুক্তি ছিল যে, পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ বাঙালি হিন্দু। এরা ইসলাম বিরোধী। এরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় তারা পরাজিত হয়েছেন। “ভবিষ্যতে শাসন কায়েম রাখতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে থাকা হিন্দু বাঙালিদের স্রেফ ছেঁটে ফেলা দরকার” বলে মন্তব্য করেন ইয়াহিয়া। বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযনে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের যুক্তি ছিল যে, “পূর্ব পাকিস্তান ভারতের দাসত্ব করছে। বহু ত্যাগের পর যে স্বাধীনতা এসেছে তাকে এবং দেশটাকেই আওয়ামীলীগ ধ্বংস করে দেবে।” তখন পাক সেনারা একে অপরের সঙ্গে মজা করে বলত,“আজ কত হিন্দু মেরেছ ?” জে বাস লিখেছেন, সশস্ত্র পাক সেনাদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় এক কোটি নিরস্ত্র হিন্দুর অসম লড়াই হয়েছিল। ভারতের সহযোগিতার কলঙ্ক এবং নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য সাধনের অভিযোগের তকমা লাগানো হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের গায়ে। যে কারণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হিন্দুদের ওপর চালিয়েছিল মর্মান্তিক গণহত্যা। বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলোর হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধে ২২ লাখের বেশি হিন্দু শহীদ হয়েছেন। এছাড়া ওই সময় প্রায় ১ কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে। দি ব্ল্যাড টেলিগ্রাম : নিক্সন কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটন জেনোসাইড বইতে গ্যারি জে বাস আরো লিখেছেন, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্চার ব¬াড ভেবেছিলেন, হিন্দুদের নিধন বা তাড়নো নিয়ে বেশি হইচই করার প্রয়োজন নেই। বইতে সে সময় ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যও স্পষ্ট উলে¬খ করা হয়েছে। তিনি এক বৈঠকে রিচার্ড নিক্সনকে স্বয়ং জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। আতঙ্কে প্রতিদিন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এক সময় কিসিঞ্জার নাকি বলেছিলেন, ইয়াহিয়া খান আবার একটা মূর্খের মতো ভুল করলো হিন্দুদের তাড়িয়ে। যদিও সেই বৈঠকে রাষ্ট্রদূতের কথার কোন উত্তর দেননি কিসিঞ্জার। জবাব মেলেনি নিক্সনের পক্ষ থেকেও। ভারত এবং আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থ এবং নিরবতার কারণেই বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র হিন্দুদের নির্বিচারে খুন করতে উৎসাহ পেয়েছিল বলে মনে করেন জে বাস। ৪০ বছর পর এই তথ্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করলো।

মিথ্যাবাদী জাকিরের পবিত্র ও সত্য বৈদিকধর্মের সম্বন্ধে মিথ্যাচার পর্বঃ০১

আমরা জানি যে আব্রাহামিক ধর্মসমূহের বিভিন্ন পুস্তকাদিতে তাদের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের হারেমে যৌনদাসী রাখার কথা পাওয়া যায়।সেই লজ্জা ঢাকতেই জাকির নায়েক দাবী করলেন যে বৈদিক ধর্মেও নাকি তাদের মতই যৌনদাসীর কথা বলা আছে! এ ব্যপারে তিনি দাবী করেছেন যে ঋগ্বেদ ৬.২৭.৮ নাকি যৌনদাসীর কথা বলেছে!অথচ সেখানে দেখা গেল এরকম কিছুই নেই!প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রটি একজন দেশপ্রেমিক রাজার তার মন্ত্রীদের সহযোগে দেশকে সুখী রাখার রাষ্ট্রনীতি ব্যখ্যা করেছে। দেখে নেয়া যাক মন্ত্রটি কি বলছে- "দ্বয়ান অগ্নে রথিনো বিংশতিং গা বধূমতো মঘবা মহ্যং সম্রাট। অভ্যাবর্তী চাযমানো দদাতি দূনাশেয়ং দক্ষিনা পার্থবানাম।।" (ঋগ্বেদ ৬.২৭.৮) অনুবাদ-অগ্নি,হে প্রকাশমান পরমাত্মা,সমস্ত শক্তি,ঐশ্বর্য্য, সম্মান ও প্রশংসার উত্স,সকল সত্যের জয় ও প্রগতির দাতা,সকলের বরনীয়,আমি যেন দেশকে সুখী করার ও জনগনকে ভালো করার জন্য সুসজ্জিত রক্ষাবাহিনী ও বিশজন সুদক্ষ মন্ত্রীরুপ দ্বিরথ অর্জন করতে পারি। জাকির নায়েক আরো বলেছে যে শ্রীমদ্ভগবদগীতার ১.৪০ এ নাকি মেয়েদেরকে বংশ নষ্টের জন্য একমাত্র দায়ী বলেছে!অথচ শ্লোকটি হল- অর্জুন বলছে, "হে কৃষ্ণ! অধর্মের অতি বাড় হলে কুলের স্ত্রীগন এর চরিত্রও নষ্ট হয় আর তা হলে বর্ণসঙ্কর উত্পন্ন হয়।" অর্থাত্ যদি কুলের পুরুষরা অধর্মের বাড় করে তখন ধীরে ধীরে নারীরাও দুশ্চরিত্র হয়ে পড়ে,আর এতে ব্যভিচারাদি বেড়ে যায়! এর চেয়ে সত্য কথা আর কি হতে পারে! এইসব ভন্ডামী ও মিথ্যাচারীতা থেকে সাবধান থাকুন...

মোহাম্মদ মজিদ এখন ধর্ম দাস হলেন।

মুসলিম পরিবারে জন্মে ছিলেন মোহাম্মদ মজিদ। শান্তির খোঁজ করেও কখনো শান্তির দেখা পায়নি মোহাম্মদ মজিদ।।তিনি এক চিলতে শান্তির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন,ভেবে দেখেছেন বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে। অবশেষে খুঁজে পেলেন শান্তির ধর্ম, গ্রহন করলেন "হিন্দু ধর্ম"। মোহাম্মদ মজিদ এখন ধর্ম দাস হলেন।এটা আমার কথা নয় ধর্ম দাসের কথা।বাস্তরিত জানতে নিচের লিংঙ্কে ক্লিক করুন। http://www.hinduhumanrights.info/majid-khan-to-dharam-dass-returning-back-to-my-ancestral-roots/

জানতে হলে পড়তে হবে:

1)শ্রীমদ্ভাগবদগীতার জ্ঞান সর্বপ্রথম লাভ করেন সূর্যদেব । 2)কুরুক্ষেত্রের ময়দানে সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারী যোদ্ধা পিতামহ ভীষ্ম। 3)ব্রহ্মান্ড নির্মানের সময় প্রথম শব্দটি ছিল ওম। 4)ঈশ্বরের প্রথম সাকার রূপ মহাবিষ্ণু। 5)ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে নরককুন্ডের সংখ্যা ৮৬ টি। 6)বেদে কে চার ভাগে ভাগ করেন মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাস। 7)বেদে ভগবান শিব কে আমরা রুদ্র নামে জানি । 8)বৈদিক যুগে দেবতাদের প্রসন্ন করবার মাধ্যম ছিল যজ্ঞ। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের রচয়িচা বেদব্যাস। 9)ইন্দ্রের সভার নাম সুধর্ম । 10)দ্বারকা নগরী ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্তিত মহাভারতে কর্নের পালক বাবার নাম অধিরথ। 11)স্বর্গের রাজধাণীর নাম অমরাবতী। 12)ভগবান বিষ্ণুর বুকে ঋষি ভৃগুর পদচিহ্ন রয়েছে । 13)ভগবান বিষ্ণুর তিন ধরনের নাগেরউপর শয়ণ থাকেন যথা -পঞ্চনাগ , শীষনাগ এবং অনন্তনাগ 14)শ্রীচৈতন্য ব্রাহ্মণ বর্নে জন্ম গ্রহন করেন (পরে প্রত্যাখান করেন) 15)ভগবান বিষ্ণুর নাভি কমল থেকে উত্পত্তি ব্রহ্মার। 16)শ্রীশ্রীচন্ডীতে ও গীতাতে শ্লোক সংখ্যা ৭০০টি 17)দেবী মাহাত্ম পাঠ করেন ঋষি মেধস। 18)শ্রীশ্রীচন্ডী মতে প্রধান তিনজন দেবী মহালক্ষী, মহাকালী. মহাসরস্বতী। শ্রীকৃষ্ণের পায়ে শরবিদ্ধ করেন জরা। 19)কালিকা পুরাণ মতে মহিষাসুর দেবী দূর্গার সাথে যুদ্ধের পূর্বে ভদ্রা কালী আরাধনা করেন 20)এই পৃথিবীর জন্ম মধু এবং কৈটভের ভষ্ম থেকে।

হিন্দু দেব-দেবীদের ছবি দিয়ে ৭টি ডাক টিকিট প্রকাশ করলো আমেরিকা।

শুনে অবাক হলেও এটা চরম সত্য ! এই ডাক টিকিট গুলো মধ্যে রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, সাই বাবা,মুরুগণ, গনেশ, লক্ষী, লর্ড ভেঙ্কটেশ্বর, এবং মহাদেব শিব ও পার্বতী । প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৪৪ সেন্ট (পয়সা ) !প্রতিটি ধর্মকে সন্মান করতে আমেরিকার এই উদ্যেগ ! তাদের এই উদ্যেগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।যারা আমেরিকায় থাকেন তারা এই ডাক টিকিট বেশি বেশি কিনে হিন্দু ধর্ম প্রচারে ভুমিকা রাখুন।আমেরিকায় ২.৫ মিলিয়ন এর বেশী হিন্দু রয়েছে।সেখানকার হিন্দু সংস্থাগুলো দীপাবলীর ডাকটিকিট এর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তার জন্য দরকার ভোট বা সাইন ইন. নিচের লিঙ্কে ভোট বা "সাইন ইন" করে আমেরিকার হিন্দুদের সাহায্য করুন : http://www.petitiononline.com/diwali03/petition.html

ভারতীয় হিন্দু সত্য নাদেলার আগমন, বিদায় বিল গেটসের

মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফটের নতুন ‍সিইও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ভারতীয় বংশদ্ভুত সত্যনারায়ণ নাদেলা। স্টিভ বলমার সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী বলে বিবেচিত এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ৪৬ বছর বয়সী নাদেলা শীর্ষ পদে এলেন। অপর দিকে প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সিইও বিল গেটস মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। মঙ্গলবার মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে নাদেলার নিয়োগের খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে ২২ বছর ধরে কাজ করছেন। সিইও নিয়োগ পাবার আগে নাদেলা মাইক্রোসফটের ক্লাউড অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। প্রযুক্তি বিশ্বে বিল গেটেসের বিদায়ের চেয়ে নাদেলার নিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিল গেটস দীর্ঘদিন ধরেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথা বলে আসছিলেন। অতীতে তিনি একাধিকবার তার প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সত্য নাদেলার নিয়োগকে প্রযুক্তিবাজারে মাইক্রোসফটের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যে ডেস্কটপ কম্পিউটারকে ভিত্তি করে আশি ও নব্বই দশকে মাইক্রোসফটের উত্থান ও প্রসার, গত এক দশকে বিশ্বে প্রযুক্তিচিত্র তার তুলনায় যথেষ্ট পাল্টে গেছে। অন্যান্য নির্মাতা, বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের প্রভাবে প্রযুক্তিবাজার এখন স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটমুখি। ‌ এমন বাস্তবতায় ‘মাইক্রোসফট সম্ভবত ক্লাউডকে বিবেচনা করছে নতুন প্রযুক্তিক্ষেত্র হিসেবে’-মন্তব্য করা হয়েছে মার্কিন বাণিজ্য দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে। ২০১১ সালে ক্লাউডভিত্তিক সেবার দায়িত্ব নেয়ার পর দুই বছরে তার অধীনে বিভাগের আয় ১৬.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০.৩ বিলিয়নে দাঁড়ায়। বর্তমানে মাইক্রোসফটের আয়ের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই যোগান দেয় এই বিভাগ। ভারতের হায়দ্রাবাদে ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহন করা নাদেলা স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কর্ণাটকের মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন- মেলওয়াকি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স এবং ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো বুথ স্কুল অফ বিজনেস থেকে এমবিএ অর্জন করেন।

Saturday, January 18, 2014

বিবাহিত হিন্দু মেয়েরা কেন সিঁদুর পরে ???

শাঁখা সিঁদুর আমাদের হিন্দু বিবাহিত নারীরা পরে আসছে অনেক আগে থেকে ।। তবে বর্তমানে এগুলা না পরা অনেকটা আধুনিকতার স্বারুপ হয়ে দারাচ্ছে কারো কারো কাছে তাই আসুন আজ আমরা দেখে নেই শাঁখা সিঁদুর পরার কারন আর কেন এটা পরা উচিত........... আধ্যাত্মিক কারণ : শাঁখার সাদা রং- সত্ত্ব, সিঁদুরের লাল রং -রজঃ এবং লোহার কাল রং- তম গুণের প্রতীক। সংসারী লোকেরা তিনটি গুণের অধীন হয়ে সংসারধর্ম পালন করে। সামাজিক কারণ : তিনটি জিনিস পরিধান করলে প্রথম দৃষ্টিতেই জানিয়ে দেয় ঐ রমণী বিবাহিত,তার স্বামী আছে অর্থাৎ জীবনে চলার পথে সে একা নয়। সে কারণেই অন্য পুরুষের লোভাতুর, লোলুপ দৃষ্টি প্রতিহত হয়। স্বামীর মঙ্গল চিহ্ন তো অবশ্যই। সৌন্দর্যগত কারণঃএক জন মহিলা সিদুর পরলে নিশ্চিত ভাবে তাঁকে আরও বেশি সুন্দর দেখায়।এ কারনে এখন দেখা যায় অনেক অহিন্দু রমণীও শাঁখা সিদুর পরেন। লক্ষ্য করবেন - * সিঁদুর দেয়ার সময় মায়েরা নিচের দিকে নয়, ঊর্ধ্বায়ণ করে। কেন? সিঁদুর ঊর্ধ্বায়ণের মাধ্যমে রমণীগণ নিয়ত তার স্বামীর আয়ু বৃদ্ধির প্রার্থনা করে। *শুভ বিজয়াতে বা বিভিন্ন পূজা পার্বণে মায়ের দেবী দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান বা একে অন্যে সিঁদুর পড়ান। কেন? দুর্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন সিঁথির সিঁদুর যেন অক্ষয় থাকে। একে অন্যকে পড়ান সে বাসনাতেই।

নমস্কার ও প্রনাম সম্পর্কে ৫ টি তথ্য

1 নমস্কার ছোট-বড় সকলকে জানানো যায়। যেমন একজন বয়স্ক মানুষ তার নাতী/ নাতনীকে এভাবে সম্বোধন করতে পারেন,''নমস্কার দাদু--কেমন আছ?'' নমস্কার জানাতে কোন লজ্জা নেই। বরং সম্মানের বিষয়। 2 বয়সে বড়দের প্রনাম করুন। কিন্তু ছোট কাউকে প্রনাম করতে নেই। এমনকি কাকা, মাসি, পিসি ছোট হলে ও নয়। 3 বিগ্রহকে কখনো একহাতে প্রনাম করতে নেই, সর্বদা দুইহাতে বুকে ও মাথায় হাত ঠেকিয়ে করতে হবে। 4 মন্দিরের ভিতরে/ বিগ্রহের সামনে কখনো কাউকে প্রনাম করতে নেই। 5 ঘুমন্ত বা শায়িত ব্যক্তি কে প্রনাম করা উচিত না। আপনাদের মূল্যব্যান মতামত আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে অনুপ্রেরণা। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। নমস্কার সবাইকে।

আমেরিকান সনাতন ধর্মাবলম্বী

ইহুদিদের টপকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখন আমেরিকায় শিক্ষায় , মেধায় , আর্থিক ও সামাজিক সহ সকল সূচকে উচ্চতর অবস্থানে ( এক নম্বরে ) আছে । পূর্বে ইহুদিদের দখলে ছিল এই স্থান, খ্রিস্টানদের অবস্থান অনেক পেছনে । আর মুসলমিদের অবস্থান সবার নীচে ! আমেরিকান সরকারের জরিপ অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে । এ জরিপ অনুয়ায়ী কিছু তথ্য হল: * ৩৬ % নাসা বিজ্ঞানী সনাতন ধর্মাবলম্বী। * ৩৮ % আমেরিকার ডাক্তার সনাতন ধর্মাবলম্বী। * ৩৪ %মাইক্রোসফটের কর্মকর্তা সনাতন ধর্মাবলম্বী। * ২৮ % আইবিএম কর্মকর্তা সনাতন ধর্মাবলম্বী। * ১৭ % ইন্টেল কর্মকর্তা সনাতন ধর্মাবলম্বী। * ৪৮% আমেরিকান সনাতন ধর্মাবলম্বীরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে, বিবাহ বিচ্ছেদের হারও এদের মধ্যে কম। * ৪৮% আমেরিকান সনাতন ধর্মাবলম্বীর পারিবারিক আয় ১০০,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি। ৭০% অন্তত ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার আয় করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে সর্বোচ্চ । ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর রিপোর্ট অনুযায়ী সেদেশের মোট সনাতন ধর্মাবলম্বীর ২.৪ মিলিয়ন; যা মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ০.৭%। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ধারণা―যেমন কর্মবাদ, পুনর্জন্মবাদ ও যোগসাধনা―এখন মূলধারার মার্কিন জনসাধারণের কাছে সুপরিচিত। ২৪% আমেরিকান সনাতন ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী ।ABHIJIT DEY

জাতিভেদ প্রথা(Caste System)

আসুন আগে দেখে নেই গীতায় এ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ? ১৮/৪১ “হে পরন্তপ ,স্বভাবজাত গুণের জন্যই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র,এই চার জাতির কর্ম সমূহ বিভক্ত হয়েছে ।” ব্রাহ্মণের কি কাজ বা করনীয় ? ...১৮/৪২ ‘শম, দম ,তপস্যা,ক্ষমা,ক্ষান্তি,সরলতা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য – এই ,কয়েকটি, ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত কর্ম ।’ অর্থাৎ এগুলো না থাকলে কাউকে ব্রাহ্মণ বলা যাবে না । ক্ষত্রিয়ের কী করণীয় ?......১৮/৪৩ “শৌর্য,তেজ, ধৃতি,দক্ষতা,অপরাদন্মুখতা, দানশীলতা ও শাসন ক্ষমতা – এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম ।” শূদ্রের কী করণীয়?....১৮/৪৪ “কৃষি,গোরক্ষা,ওবাণিজ্য – এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বাভাবিক কর্ম । পরিচর্যা শূদ্রের স্বভাবজাত কর্ম । জন্ম সূত্রে কেউ ব্রাহ্মণ বা শূদ্র হতে পারে না । ভগবানের সেবাই তার পরিচয় ।

হিন্দু ধর্মে বৈদিক বিবাহ রীতির ধাপসমূহের সংকলন ধাপসমূহঃ

1পাটিপত্রঃপাটিপত্র বাঙালি হিন্দু বিবাহের প্রথম আচার। এই আচার লগ্নপত্র বা মঙ্গলাচরণ নামেও পরিচিত। ঘটকের মাধ্যমে সম্বন্ধ করে বিবাহ স্থির হলে নগদ বা গহনাপত্রে যৌতুক ও অন্যান্য দেনাপাওনা চূড়ান্তভাবে স্থির করার জন্য যে অনুষ্ঠান হয়, তাকেই পাটিপত্র বলে। এই আচারের মাধ্যমেই বিবাহের অন্যান্য আচারের সূচনা ঘটে। 2পানখিলঃপানখিল বাঙালি হিন্দু বিবাহের দ্বিতীয় আচার। এটি পাটিপত্রের ঠিক পরেই পালিত হয়। পানখিলের অর্থ পান পাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে খিল দেওয়া বা খড়কে বেঁধানো। এই আচারটি প্রথমে বরের বাড়িতে এবং পরে কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পানখিল আচারে বাড়ির মেয়েরা এবং প্রতিবেশিনীরা ‘বিয়ের গান’ গেয়ে থাকেন। এই গানের বিষয়বস্তু হল রাম ও সীতার বিবাহ। 3দধি মঙ্গল: বিবাহের দিন বর ও কন্যার উপবাস। তবে উপবাস নির্জলা নয়। জল মিষ্টি খাওয়ার বিধান আছে। তাই সারাদিনের জন্য সূর্য্যোদয়ের আগে বর ও কন্যাকে চিড়ে ও দৈ খাওয়ানো হয়। 4গায়ে হলুদ: সংস্কৃত ভাষায় এই রীতিকে বলা হয় গাত্রহরিদ্রা। হিন্দু ধর্মে কয়েকটি জিনিসকে শুভ বলা হয়। যেমন শঙ্খধ্বনি, হলুদ ইত্যাদি। প্রথমে বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে হলুদ মাখানো হয়। পরে সেই হলুদ কন্যার বাড়ী পাঠানো হয়। কন্যাকে সেই হলুদ মাখানো হয়। 5শঙ্খ কঙ্কন: কন্যাকে শাখা পরানো হয়। এরপর বিকালে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় 6বর বরণ: বর বিবাহ করতে এলে তাকে স্বাগত জানান কন্যাপক্ষ। সাধাবনত: কন্যার মা তার জামাতাকে একটি থালায় প্রদীপ, ধান দুর্ব্ব ও অন্যান্য কিছু বরণ সামগ্রী নিয়ে বরণ করেন। এরপর বরকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় ও দুধ এবং মিষ্টি খাওয়ানো হয় । 7সাত পাক: বিবাহের মন্ডপে প্রথমে বরকে আনা হয়। এরপর কন্যাকে পিঁড়িতে বসিয়ে আনা হয়। সাধারণত: কন্যার জামাইবাবুরা পিঁড়ি ধরে থাকেন। কন্যা পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রাখেন। কন্যাকে পিঁড়িতে করে বরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়। 8শুভদৃষ্টি: বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখন। 9মালা বদল: কন্যা ও বর মালাবদল করেন। এই রীতির অর্থ হচ্ছে দুজন একে অন্যকে জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিলেন। মুসলমান মতে একই ভাবে কন্যাকে বলতে হয় "কবুল"। আবার ঠিক এই রকমই খৃষ্টান মতে চার্চের ফাদারের সামনে বর ও কন্যা বিবাহে সন্মতি জানান। 10সম্প্রদান: কন্যার পিতা কন্যাকে জামাতার হাতে সম্প্রদান করেন বেদমন্ত্রে। বরও জানান যে তিনি কন্যার ভরন পোষনের দ্বায়িত্ব নিলেন। বিবাহের মন্ত্র হল যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম। 11অঞ্জলি: কন্যা ও বর খৈ অগ্নাহুতি দেন। প্রচলিত বাংলায় একে বলে খৈ পোড়া। বৈদিক যুগে মানুষ নানা ধরনের শক্তির উপাসনা করতেন। অগ্নিও তাদের মধ্যে অন্যতম। 12সিঁদুর দান: বিবাহের শেষ রীতি হল বর কন্যার কপালে সিঁদুর লেপন করেন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরেন। জাতিভেদে ও অঞ্চলভেদে এই রীতি কিছু পরিবর্তিত হয়। তবে জানাবেন। ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নমস্কার সবাইকে।
visitors by country counter
flag counter

আর্য আক্রমণ তত্ত্ব: নির্লজ্জ এক মিথ্যাচারের গল্প

ছোটবেলা থেকেই আমরা কল্পকাহিনী শুনতে অভ্যস্ত। এগুলো আমাদের পাঠ্য পুস্তকেও পড়ানো হয়। যেমন আর্যরা ছিল বহিরাগত। তারা ইউরোপ থেকে এসে ভারত দখল করে। বিজয়ী আর্যরা পরাভূত প্রাগার্য গোষ্ঠী ও কৌমের মানুষদের দাস, দস্যু, রাক্ষস বা অসুর বলে উল্লেখ করেছে আর নিজেদের মনে করেছে উন্নততর মানবপ্রজাতির অংশ। এই আর্যদের ধর্মই বৈদিক ধর্ম যা কালক্রমে হিন্দু ধর্ম নামে পরিচিতি পায়। হিন্দু সমাজের প্রচলিত বর্ণপ্রথায় শুদ্ররাই হচ্ছে এই অনার্যদের বংশধর। গত দেড়শ বছর ধরে এই ‘আর্য আক্রমণ তত্ত্ব’ বা Aryan Invasion Theory হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে হিন্দুবিরোধীরা ব্যবহার করছে। চরম হিন্দুবিদ্বেষী দৈনিক আমার দেশে কয়েক বছর আগে লেখা হয় হিন্দু ধর্ম বর্বর আর্যদের আমদানি করা ধর্ম। দক্ষিণ ভারত আর উত্তর শ্রীলংকার তামিলরা নিজেদের দ্রাবিড় বলে আখ্যা দিয়ে তারা উত্তর ভারতের তথাকথিত আর্য হিন্দুদের ঘৃণা করতে শিখে। হিন্দু পণ্ডিতরা যেমন স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী , স্বামী বিবেকানন্দ শুরু থেকেই এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন। আমরা কয়েকটি পর্বে এই আর্য আক্রমণ তত্ত্বের মিথ্যাচার উন্মোচন করব। ১। খ্রিস্টান মিশনারিদের চক্রান্তঃ এই তত্ত্ব সম্প্রসারণের পিছনে লর্ড মেকলে আর জার্মান দার্শনিক মাক্সমুলারের অবদান সবথেকে বেশি। এরা প্রত্যেকে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য এই কাজটি করেন। এই মাক্সমুলার প্রথম জীবনে ছিলেন একজন উদ্বাস্তু। তার আত্মজীবনীতেই রয়েছে …Had not a penny left, and that in spite of every effort to make a little money, I should have had to return to Germany.(ref –the life and letters of Maxmuller, vol.1, p.61, London edn) তাই ব্রিটিশদের ধর্মপ্রচারের কাজে তাকে যোগদান করতে হয়। তিনি তার মেধাকে ব্রিটিশদের হাতে বেঁচে দিলেন। I am to hand over to the company, ready for the press, fifty sheets each year-the same I had promised to samter in Germany; for this I have asked 200 pounds a year, 4 pounds a sheet.(ref. the life and letters of Maxmuller, vol.1, p.60-61, London edn.) কর্নেল জোসেফ বোডেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে বোম্বেতে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টান উগ্রবাদী। হিন্দুদের খ্রিস্টান বানাতে তিনি মিশনারিদের সহায়তা করতেন। ১৮০৭ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৫০০০ পাউন্ড অনুদান করেন সেখানে সংস্কৃত ভাষার উপর চেয়ার প্রতিষ্ঠা করতে। বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এর নাম করে বোডেন চেয়ার। বোডেনের লক্ষ্য ছিল বাইবেলকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করে এর মাধ্যমে হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার। এছাড়া মিশনারিরা হিন্দুধর্মকে একটি বহুশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু হিন্দুদের একেশ্বরবাদী চেতনার উৎসই হল বেদ। তাই তাদের লক্ষ্য ছিল বেদকে আক্রমণ করা। এর জন্য মাক্সমুলারের মত ধূর্ত লোকদের দরকার ছিল আরও অনেক বেশী যার ইংরেজি এবং সংস্কৃত ভাষার উপর দখল ছিল অতি জঘন্য। তার কাজ ছিল হিন্দু শাস্ত্রগুলোর অপব্যাখা করা। লর্ড মেকলে যাকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য আমাদের বুদ্ধিজীবীরা পূজা করেন তিনি জন্ম নেন এক ডানপন্থী খ্রিস্টান পরিবারে। ইংরেজি শিক্ষা এবং ইউরোপীয় ভাষা প্রচারের প্রধান লক্ষ্যই ছিল খ্রিস্টধর্ম প্রচার। ১৮৩৫ এর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন তিনি। ১৮৩৬ সালের ১২ অক্টোবর তিনি তার পিতাকে চিঠিতে লিখেন, “ our English schools are flourishing wonderfully. We find it difficult – indeed, in some places impossible – to provide instructions for all who want it. At the single town of hoogle fourteen hundred boys are learning English. The effect of this education on the hindoos is prodigious. No hindoo, who has received an English education, ever remains sincerely attached to his religion. Some continue to profess it as a matter of policy; but many profess themselves pure deists, and some embrace Christianity. It is my firm belief that if, our plans of education are followed up, there will not be a single idolater among the respectable classes in Bengal thirty years hence. And this will be affected without any efforts to proselytize; without the smallest interference with religious liberty; merely by the natural operation of knowledge and reflection. I heartily rejoice in the prospects. Ref. the life and letters of Lord Macaulay, pp. 329-330 ” লর্ড মেকলে আর মাক্সমুলারের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৮৫১ সালে লন্ডনে। পরবর্তী সাক্ষাৎ হয় ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বরে। তাদের সেই সাক্ষাৎকারে মাক্সমুলার ভাষাকে ব্যবহারের কথা জানান। তিনি লিখেন। “…I made acquaintance this time in London with Macaulay, and had along conversation with him on the teaching necessary for the young men who are sent out to India. He is very clear headed, and extraordinarily eloquent…I went back to oxford a sadder, and, I hope, a wiser man. Ref. –the life and letters of Maxmuller, vol.1, p.162, London edn” মাক্সমুলার ক্রমাগত সংস্কৃত শাস্ত্রের অপব্যাখা করতে থাকেন। এই বিষয়ে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্য প্রকাশ বইয়ের ২৭৮ পৃষ্ঠাতে লেখেন “the impression that the Germans are the best Sanskrit scholars, and that no one has read so much of Sanskrit as Prof Maxmuller, is altogether unfounded exposed Maxmuller. Yes, in a land where lofty trees never grow, even recinus communis or the castor oil plant may be called as oak…. I came to learn from a letter of a principal of some German university, that even men learned enough to interpret a Sanskrit letter are rare in Germany. I have also learnt from the study of Maxmuller’s history of Sanskrit literature and his comments on some mantras of the Veda, that prof. Maxmuller has been able to scribble out something by the help of the so-called tikas or paraphrases of the Vedas current in India” এই মাক্সমুলারই বেদের বিভিন্ন মন্ত্রের অপব্যাখা দিয়ে আর্য আক্রমণ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। ২। আর্য দ্রাবিড় বিভক্তিঃ ঋগবেদে কোথাও এই কথা নেই যে আর্যরা আক্রমণ করেছে বা বেদের দ্রষ্টা ঋষিরা ভারতের বাইরে থেকে এসেছেন। তারপরও হিন্দুবিরোধীরা অপপ্রচার চালায় ঋগবেদের বিরুদ্ধে। তারা বলে অঙ্গিরা বংশের ঋষিরা ইন্দ্রের আহ্বান করেছেন দস্যু এবং পানিদের দমন করতে এবং এটাই বুঝায় যে আর্য সেনাবাহিনী স্থানীয় ভূমিপুত্র দ্রাবিড়দের হত্যা করেছে। দ্রাবিড় শব্দের মানে কি? এর সংস্কৃত মূল দ্রব। এর অর্থ তরল জাতীয় বা জলীয়। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তামিলদের সঙ্গম সাহিত্যে দ্রাবিড় বলতে কোন শব্দ নাই। তামিলদের সঙ্গম সাহিত্য ঐ অঞ্চলের জীবন, সময়, ঘটনাপ্রবাহ এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুনির্দিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত করে। এটা তামিলদের ব্যাকরণেরও বিবর্তন নির্দেশ করে। এর সময়সীমা খ্রিস্টের জন্মের ২০০ বছর আগে থেকে খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর পরে পর্যন্ত। তাহলে আর্য বলে যদি কোন জাতি বাইরে থেকে এসে দ্রাবিড়দের হত্যা করে তাদের দক্ষিণ ভারতের দিকে অভিবাসী হতে বাধ্য করে তাহলে তামিলদের এই প্রাচীন সাহিত্যে কেন এই ঘটনার উল্লেখ নেই? নবম শতাব্দীর দিকের তামিল সাহিত্যে দ্রাবিড় শব্দটি প্রথম পাওয়া যায়। সেন্থান দিবাকরম নামে একটি শব্দভাণ্ডারে দ্রাবিড় নামটি পাওয়া যায়। এটি ব্যবহৃত হয়েছিল তামিল বুঝাতে। এটি পরিষ্কার যে দ্রাবিড়দের নিয়ে গল্পটি একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার। উনবিংশ শতাব্দীতে রবার্ট ক্যাডঅয়েল নামক এক খ্রিস্টান ইভানজেলিস্ট প্রথম এই দ্রাবিড় শব্দটি ব্যবহার করেন আর্য আক্রমণ তত্ত্বে। এরপরই এটা রাজনৈতিক রূপ পায়। ৩। ঋগবেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারঃ দেখা যাক মহাজ্ঞানীরা ঋগবেদের কোন মন্ত্রগুলো ব্যবহার করছে আর্য আক্রমণ তত্ত্ব প্রমাণ করতে। তারা ঋগবেদের ১০/৪৮ সুক্তকে দেখায় যেখানে আছে ইন্দ্র দস্যু, বৃত্র এবং পানিদের দমন করেছেন, তাদের সম্পদ নিয়ে নিয়েছেন এবং বলেছেন যারা তাঁর অনুসারী তাঁরা ব্যর্থ হবে না। বৃত্র এবং পানি দস্যুর প্রকারভেদ। কিন্তু ঋগবেদের ১/৩৩/১-১০ মন্ত্রগুলো পড়লে বুঝতে পারা যায় দস্যুদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া ইন্দ্রের সম্পদ আসলে জ্ঞান। ঋগবেদের ১/৩৩/১ মন্ত্রটি শেষ হয় “gavam ketam param avarjate nah” এই কথাগুলো দিয়ে। এর অর্থ দীপ্তিময় গাভীর সর্বোচ্চ জ্ঞান। এই মন্ত্রটির অর্থ হচ্ছে come let us go seeking the cows to Indra, it is he that increases the thought in us, for us, he releases supreme knowledge of the luminous cows. বেদে যারা আধ্যাত্মিক কর্ম করেন তাদের যাজ্যু বলা হয়েছে। এই উৎসর্গ যেই সত্ত্বাদের উদ্দেশে করা হত তাদের যাজত বলা হত। যাজ্যুকে তার শুভবুদ্ধির জন্য সুক্রাতু বলা হত। সুক্রাতু যখন ঐশ্বরিক বানী লাভ করতেন তাদের বলা হত বিশ্বের গায়ক। দস্যু শব্দটি সুক্রাতু এবং যাজ্যুর ঠিক বিপরীত। একে বলা হত অযাজ্যু। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে দস্যু বিশ্বের গায়কদের ঘৃণা করে। এই জন্য একজন দস্যুকে বলা হত ব্রহ্মদ্ভিসা এবং অনাসা ( যার কথা বলার কোন মুখ নেই ) ও অমানযামানা ( যার কোন মানসিক বিবেকবোধ নাই )। বেদে বলা আছে দস্যুদের যে জ্ঞান তা ইন্দ্র কেড়ে নেন মানুষের সাহায্যে। ঋগবেদের আরেক জায়গাতে আছে পানি এমন এক ধরণের দস্যু যারা পবিত্র গাভি চুরি করে তাদের গুহাতে আটকে রাখে। ইন্দ্র মানুষের সহায়তায় তা উদ্ধার করেন। ঋগবেদের ৬/৫১/১৪ তে ইন্দ্রের প্রতি প্রার্থনা করা হয়েছে পানিদের ধ্বংস করতে এবং পানিদের নেকড়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ঋগবেদের ৩/৩৪/৭-১০: ৭। ইন্দ্র,সাহসীদের প্রভু,যিনি সকলের শাসনকর্তা,যিনি সকল শক্তির মুল,যার শৌর্যে শক্তিশালী শৌর্যময়, এই পৃথিবীতে তার এই দান এর জন্য জ্ঞানীগন তার প্রশংসা করেন। ৮। অনন্যসাধারন,সর্বজয়ী,সকল জয়ের দাতা,আলোক এবং পানির উত্স ,স্বর্গ ও মর্তের মালিক,সেই ইন্দ্রকেই সকলে ভক্তিসহকারে বন্দনা করে। ৯। তিনি শক্তিশালী সূর্য ও অশ্ব এর মালিক(সংস্কৃত তে শক্তি এর প্রতীক হিসেবে সূর্য,অশ্ব এবং বৃষ এই তিনটি শব্দ প্রায়শই ব্যবহৃত হয়ে থাকে)।তিনি আমাদের গোসমূহ যোগান দিয়ছেন যা আমাদের দুগ্ধের যোগান দেয়।তিনিই স্বর্নময় সকল গুপ্তধনের উত্স(,তিনি দস্যুদের ধ্বংস করেন এবং আর্যদের রক্ষা করেন। ১০। তার শক্তিতেই গাছপালা বেড়ে উঠে,দিনের পর দিন আবর্তিত হয়;তিনি এই ভুখন্ড এবং বায়ুমন্ডল এর অধিকারী,তিনি অসতদের বিনাশ করেন,দাম্ভিকদের নিবৃত্ত করেন।তিনিই গাছপালা, বনজঙ্গল, আকাশ, দিনরাত্রির শৃঙ্খল রক্ষা করেন। এখন দস্যুরা যদি মনুষ্য সন্তান হয় এবং তারা অনার্য আদিবাসী হয় তবে তাদের থেকে ইন্দ্র কি করে আকাশ এবং দিনকে মুক্ত করেন? বেদে আরও আছে ইন্দ্র দস্যুদের তাড়া করেন এবং তাদের বিতাড়িত করেন স্বর্গ এবং মর্ত্য থেকে তার বজ্রের সাহায্যে। ইন্দ্রের মহত্ত্ব বাড়তে থাকে এবং ইন্দ্রের দীপ্তি দস্যুদের পলায়নের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এরপর ইন্দ্র হারিয়ে যাওয়া সূর্যকে উদ্ধার করেন এবং সেই সূর্য যখন উদিত হয় তখন তার আলোয় গুহাগুলো আলোকিত হয় যেখানে ভালা (এক ধরণের দস্যু) পবিত্র গাভীগুলি লুকিয়ে রেখেছে। তাহলে আমরা এমন এক চিত্র পাই যেটা সম্পূর্ণভাবে আর্য আক্রমণ তত্ত্বের বিরুদ্ধে যায়। পরবর্তী লেখায় বেদে দস্যু তাদের বলা হয়েছে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ৪। সঙ্গম সাহিত্য থেকে প্রমাণঃ আমরা এখন তামিলদের সাহিত্যের দিকে নজর দেই। আমরা দেখি আসলেই কি তামিলরা তথাকথিত দ্রাবিড় যারা আর্যদের হাতে নির্যাতিত হয়েছিল। সঙ্গম সাহিত্যে পৃথিবীকে ভাগ করা হয়েছে মুল্লাই (বন), কুরিঞ্ছি (পাহাড়), মারুদাম (কৃষি ভূমি), নেইদাল (সমুদ্র সৈকত) এবং পালাই (খোলা ভূমি) এই পাঁচ ভাগে। তল্কাপ্পাইয়াম সাহিত্যে আছে এই জায়গাগুলোর দেবতা হচ্ছে মুল্লাইঃ তিরুমাল/ বিষ্ণু। কুরিঞ্ছিঃ সেয়ন ( কুমার/মুরুগুয়া/ কার্ত্তিকেয়)। মারুদামঃ ভেন্দান/ইন্দ্র। নেইদালঃ বারুনান/ বরুণ। পালাইঃ কররাভাই/ শক্তি। সঙ্গম সাহিত্যের আরেকটি অংশ হচ্ছে পুরানানুরু। সেখানে আছে শিব তিনটি শহরকে ধ্বংস করেছেন (ত্রিপুরা সামহারা)। সেখানে আছে শিব এক হাতে মেরু পর্বত তুলে নেন তীরধনুক হিসেবে। একটা ভয়ংকর সরীসৃপকে তীর ধনুকের ছিলা হিসেবে ব্যবহার করেন। একটা তীরের আঘাতে শহর তিনটিতে আগুন লেগে যায় এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। পুরানানুরু সাহিত্যে কার্তিককে বারবার দেখা যায় শিবের ছেলে হিসেবে। এটা আমাদের অগ্নিকুমার যিনি পুরাণের কার্তিকেয়র প্রতিচ্ছবি তার সাথে শিবের সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে। আর্য আক্রমণ তত্ত্বের সমর্থকদের দেখা যায় শিবকে শুধু দ্রাবিড়দের দেবতা বলতে দেখা যায়। সত্য এই যে বেদের রুদ্র থেকে পৌরাণিক শিবের উৎপত্তি। তৈত্তিরীয় সংহিতা বা কৃষ্ণ যজুর্বেদ এর রুদ্রম ভাগের বিভিন্ন ভাগে রুদ্র সম্পর্কে নির্দিষ্ট ধরনের বেশকিছু বৈশিষ্ঠ্য উল্লেখিত হয়েছে।আর শিব হল সেই বেশ কিছু গুলের একটি নির্দিষ্ট অংশের প্রতীক।পরবর্তীতে রুদ্রের বদলে অধিকাংশ স্থানেই শিব শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়।তামিল গ্রন্থসমুহ যেমন পেরিয়া বা পুরানাম সমুহে শিবের যে বৈশিষ্ঠ্য দেখানো হয়েছে তা বেদের রুদ্রের সমরুপ।চিদাম্বরাম,থেবারাম এলাকাগুলোতে এখনও রুদ্রাম/চমকম পাঠ করা হয়।যদি তামিলদের শিব আর বৈদিক শিব আলাদা হত তবে তা নিশ্চয় করা হতনা।আসলে তৈত্তিরীয় সংহিতার রুদ্রাম সংস্কৃতিটাই এখনো তামিলনাড়ু, কর্ণাটকে বিদ্যমান। ৫। কেন এই আর্য আক্রমণ তত্ত্বঃ ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষাগুলোর পারস্পরিক মিল দেখে ধারণা করা হয় যে এই ভাষাভাষীরা সকলে একই পূর্বআবাসস্থল থেকে এসেছে। সংস্কৃতের সাথে ইউরোপিয়ান বেশ কয়েকটি ভাষার মিল দেখে কেবল ভাষাগত মিল দেখেই জার্মান ইন্ডোলোজিস্ট ম্যাক্স মুলারই প্রথম আর্য আক্রমণ তত্ত্বের সূচণা করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী আর্যরা রাশিয়ার দক্ষিণ অংশ থেকে মাইগ্রেট করে ভারতীয় উপমহাদেশের আদিম অধিবাসীদের আবাস তথা সিন্ধু উপত্যকায় পৌছে। ম্যাক্স মুলারের এই তত্ত্বে কেবল ভাষাগত মিলকে বিবেচনায় নিয়েই এরকম একটি তত্ত্বকে দাঁড় করানো হয়। সিন্ধু সভ্যতার কোন আর্কিওলজিকাল এভিডেন্স তখনও আবিস্কৃত হয়নি। পরবর্তীতে ১৯২০ সালের দিকে যখন হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো ও লোথাল নগর সভ্যতা আবিস্কৃত হয় তখন তত্ত্বটির খানিকটা পরিবর্তন হয়। যাযাবর বর্বর আর্যরা ইউরোপ থেকে এসে উন্নত নগর সভ্যতায় আক্রমণ করে এবং তাদেরকে পরাজিত করে সভ্যতাগুলোকে ধ্বংস করে। মহেঞ্জোদারো খনন করতে গিয়ে মন্টিমার হুইলার একেবারে উপরের অংশে কিছু মানুষের খুলি-হাড়গোড় পেলে এ তত্ত্বটি আরো দৃঢ় হয় এবং মোটামুটি সর্বজনবিদিত তত্ত্বে রূপান্তরিত হয়। তত্ত্বটি অনুযায়ী খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে আর্যরা ভারতের প্রাচীন কিন্তু সভ্য অধিবাসী দ্রাবিড়দের আক্রমণ করে। এই অসভ্য-বর্বর-যাযাবর-পশুপালক জাতিই আর্য জাতি। এদের হাতেই ঋগ্বেদ রচিত হয়। কী সহজ ইতিহাস! এবারে দেখি তাদের এ ধরণের ইতিহাস লেখার কারণগুলো কী কী। ম্যাক্স মুলার বা অন্য যারা এই তত্ত্বের প্রবক্তা ও প্রচারক তারা সবাইই মনে করতেন বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব নির্ভুল। সুতরাং পৃথীবীর বয়স কোনক্রমেই খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের বেশী যেতে পারে না। সুতরাং খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ এর বেশি তারা মোটেই ভাবতে পারেনি কারণ বাইবেল অনুযায়ী নুহের প্লাবন হয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে। কেউ কেউ অবশ্য আরো নিচে নেমে এসেছেন। কারো কারো মতে খ্রীষ্টপূর্ব ১১০০-৯০০ সালও হতে পারে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জার্মান আর্যশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব। যেহেতু ঋগ্বেদের রচয়িতারা নিজেদেরকে আর্য বলেছেন সুতরাং ইতিহাস তৈরি হয়ে গেল। এবার আসি এই ইতিহাসের পূনর্মূল্যায়নে। ঋগ্বেদে আর্য শব্দটি কি একটি জাতিকে বুঝিয়েছে? ঋগ্বেদে আর্য শব্দটি গৌরব বা মর্যাদার অর্থ বহন করেছে, মোটেই কোন জাতিকে বুঝায়নি। ইরানী আবেস্তায়ও আর্য শব্দটি গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্ববোধের পরিচায়ক। আর্য ও দ্রাবিড় যদি দুটো ভিন্ন জাতি হত তাহলে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অধিবাসীদের একই দেবতা, একই ঈশ্বর, প্রায় একই ভাষা (সংস্কৃত থেকে উদ্ভুত), একই পৌরাণিক বিশ্বাস ও গল্প হতে পারত না। দ্রাবিড়িয়ান কি কোন আলাদা জাতিগোষ্ঠী? তা তো নয়। তাহলে দাড়ায়- ককেশিয়ানরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে একদল আর্য আরেকদল দ্রাবিড়িয়ান হয়েছে। দুই মহাদেশের বিশাল অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের ভাষা একই পরিবারভুক্ত হওয়ায় এবং একইসাথে আবেস্তা ও ঋগ্বেদের মিল দেখে পণ্ডিতগণ অনুমান করেছিলেন যে এরা একই আদি জনগোষ্ঠী থেকে ছড়িয়ে পড়ে সভ্যতা গড়ে। তাদের অনুমান ঠিকই ছিল কিন্তু যখন তারাই এই আর্যদের যাযাবর পশুপালক বর্বর বলেন আবার ঋগ্বেদও তাদের দ্বারা রচিত বলেন তখন তাদের ইতিহাস প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে উতড়ে যেতে পারে না। ঋগ্বেদ যদি তথাকথিত আর্যদের দ্বারা রচিত হয় তাহলে কেন ঋগ্বেদে কোথাও ইউরোপীয় স্থান, নদী ইত্যাদির নামও নেই? তারা যখন বলেন আর্যরা খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে সিন্ধু সভ্যতা আক্রমণ করে আর এদিকে আমরা ঋগ্বেদে খরস্রোতা স্বরস্বতী নদী দেখতে পাই, যে নদী খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে মরে যায় (সম্ভবত প্লেট টেকটোনিক মুভমেন্টের জন্য) তখন এ ইতিহাস যে মিথ্যা তা আর দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না। তাছাড়া পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের মেহরগড় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি খননের পর দেখা যায় প্রায় ৯৫০০ বছর আগে নবপ্রস্তর যুগে এখানকার অধিবাসীরা যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থিতিশীল গ্রামীণ কৃষি জীবনে চলে গিয়েছিল। খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০ সাল পর্যন্ত সেখানে কোন বাইরের জনগোষ্ঠীর আগমণ ঘটেনি। ঋগ্বেদ যে কোন যাযাবর জনগোষ্ঠীর রচিত হতে পারে না তা ফুটে ওঠে এর সমাজচিত্র রূপায়নে, গৃহনির্মাণের উপমা প্রয়োগে, অট্টালিকা, তন্তুবায়, ভেষজ চিকিৎসা ইত্যাদি শব্দপ্রয়োগে। চান্দ্রমাসে হিসাব করলে যে প্রতি তিন বছর একটি ১৩ মাসে বছর হতে হয় (যা কৃষিকাজ ইত্যাদির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়), যাকে বৈদিক সমাজ মলমাস বলত (এখনো হিন্দুরা বলে) তাও বেদে উল্লেখ পা্ওয়া যায়। এরকম কয়েকশ উদাহরণ দেয়া যাবে যাতে প্রমাণিত হয় যে বেদের রচয়িতা মোটেই তথাকথিত আর্যরা হতে পারে না। প্রত্মতাত্ত্বিকভাবে এখন জানা যাচ্ছে যে মেহেরগড়ে মৃৎশিল্প-পূর্ব যুগে এখানকার মানুষ স্থিতিশীল বসতি গড়ে এবং পশুপালন ও কৃষিকাজ শুরু করে। পরবর্তীতে কালক্রমে তারা বৃহত্তর সিন্ধু-সরস্বতী উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাম্রযুগ ও আদি হরপ্পান পর্যায় পেরিয়ে তারা প্রায় ২৬০০ খ্রীস্টপূবাব্দ থেকে ১৯০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এক স্থায়ী নগর সভ্যতা গড়ে তোলে যাকে হরপ্পান সভ্যতাও বলা হয়। সকলকে জানিয় দিন‌। নমস্কার‌। লেখক- রজত দাশ গুপ্ত

Monday, January 6, 2014

বেদে কোনো বর্ণভেদ নেই

এটা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক যে, যে বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়ে বেদ হলো সমাজের মূল ভিত্তি, সেখানে আমরা ভুলেই গেছি বেদের মূল শিক্ষাগুলো এবং নিজেদেরকে নানা ভুল-ভ্রান্তিসমূহের ধারণায় জড়িয়ে ফেলেছি যেমন, জন্মগত caste system-সহ নানারকম বৈষম্য। এরকম বিপথগামী চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা আমাদের সমাজকে ভীষণ ক্ষতিসাধন করেছে এবং বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটিয়ে দিয়েছে। দলিত নামক জাতিচ্যুত ব্যক্তিদের আমরা দূরে ঠেলে দিয়েছি এবং এর ফলে আমাদের উন্নতি ও প্রগতির বিকাশ স্থবির হচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে হিন্দু সমাজের মূলে গিয়ে বেদকে জানা - যার ফলে আমরা আমাদের মধ্যে ভাঙা সম্পর্কগুলো পুনরায় স্থাপণ করতে পারব। এই লেখায় আমরা চেষ্টা করব বেদ অনুযায়ী আমাদের caste system সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস উদঘাটন করার এবং শূদ্রের আসল অর্থ খোঁজার। ১। প্রথমত, কোনো প্রকার হিংসা বা বৈষম্যের স্থাণ নেই বেদে যেকোনো ব্যক্তি সম্পর্কে - সে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, বা শূদ্র কিনা। ২। Caste system প্রায় নতুন। বেদে কোনো শব্দ নেই যার অর্থ বর্ণ/জাতি হতে পারে। আসলে, caste, জাতি আর বর্ণ এগুলো এক একটি এক এক অর্থ বহন করে। Caste হলো একটি ইউরোপীয় নবধারা যার সাথে বৈদিক সংস্কৃতির কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। জাতি 'জাতি'র অর্থ হচ্ছে এক শ্রেণীভুক্তকরণ যার উৎস হচ্ছে জন্মে। ন্যায় সূত্র বলেছে "সমানপ্রসাভাত্মিকা জাতিহ্‌" অথবা তারা যাদের একইপ্রকার জন্মসূত্র যা এদেরকে একটি জাতিতে সমষ্টিবদ্ধ করে। একটি প্রাথমিক আরো বড় শ্রেণীভুক্তকরণ ঋষিদের দ্বারা করা হয়েছে চারভাবে: উদ্ভিজ (অর্থাৎ গাছপালা), আন্ডাজ (অর্থাৎ ডিম থেকে যার উৎপত্তি যেমন পাখি এবং সরীসৃপ), পিন্ডজ (স্তন্যপায়ী), উষ্মজ (তাপমাত্রা বা পরিবেষ্টনকারী আবহাওয়ার জন্য যার জন্ম যেমন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি)। তেমনিভাবে নানাপ্রকার পশুসমূহ যেমন হাতি, সিংহ, খরগোশ ইত্যাদি তৈরি করে এক ভিন্ন 'জাতি'। একইভাবে সমস্ত মানবকুল তৈরি করে একটি 'জাতি'। একটি নির্দিষ্ট জাতির থাকবে একই ধরনের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য যারা সেই জাতি থেকে আরেক জাতিতে পরিবর্তিত হতে পারবে না এবং ভিন্ন জাতির বাচ্চা প্রসব করতে পারবে না। অর্থাৎ, জাতি হচ্ছে ঈশ্বরের সৃষ্টি। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রেরা কোনোভাবেই ভিন্ন জাতি নয় কারণ তাদের মধ্যে জন্ম সূত্রগত বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগত কোনো পার্থক্য নেই যা তাদেরকে ভিন্ন করবে। পরবর্তীতে 'জাতি' শব্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে যেকোনো প্রকার শ্রেণীভেদকরণের জন্য। তাই সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সমাজকেও ভিন্ন ভিন্ন 'জাতি' হিসেবে আখ্যা দেই। কিন্তু এ শুধু ব্যবহারের সুবিধার জন্য। আসলে আমরা মানবকুল এক জাতিরই অংশ। বর্ণ প্রকৃত যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র বোঝাতে তা হলো 'বর্ণ' ('জাতি' নয়)। 'বর্ণ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এই চারকে বোঝাতেই নয়, বরং দস্যু ও আর্যদেরকেও। 'বর্ণ' অর্থ হচ্ছে তাহাই যাহা গ্রহণ করা হয় পছন্দের দ্বারা। তাই, যেখানে 'জাতি' ঈশ্বর দ্বারা প্রদত্ত, 'বর্ণ' হচ্ছে আমাদের নিজস্ব পছন্দগত। যারা আর্য হতে পছন্দ করে তাদের বলা হয় 'আর্য বর্ণ'। তেমনি যারা দস্যু হতে পছন্দ করে, তারা হয় 'দস্যু বর্ণ'। একইভাবে হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। এই কারণেই বৈদিক ধর্মকে বলা হয় 'বর্ণাশ্রম ধর্ম'। বর্ণ শব্দটি ইঙ্গিত করে যে এটির ভিত্তি হচ্ছে নিজ পছন্দকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া ও যোগ্যতা অনুসারে পরিচালিত ব্যবস্থাকে অনুমোদন দেয়া। ৩। যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত, তারা পছন্দ করেন 'ব্রাহ্মণ বর্ণ'। যারা প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ-বিগ্রহ পছন্দ করেন, তারা হন 'ক্ষত্রিয় বর্ণ'। যারা অর্থনীতি ও পশুপালনাদি পছন্দ করেন তারা হন 'বৈশ্য বর্ণ' এবং যারা নিয়োজিত আছেন অন্যান্য সেবামূলক কাজ-কর্মে, তারা হন 'শূদ্র বর্ণ'। এসব শুধু বোঝায় নানা ধরনের পছন্দ যেসব মানুষজন তাদের কর্মের জন্য নির্বাচন করেন এবং এর সাথে 'জাতি' বা জন্মের কোনো সম্পর্ক নেই। ৪। পুরুষ সুক্তের অন্যান্য মন্ত্রসমূহ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, ব্রাহ্মণ এসেছে ঈশ্বরের মুখ থেকে, ক্ষত্রিয় হাত থেকে, বৈশ্য উরু থেকে এবং শূদ্র পা থেকে। সেইভাবে এইসব বর্ণসমূহ জন্মগত। কিন্তু কোনোকিছুই এর চেয়ে বেশী ভ্রান্তিজনক হতে পারে না। আসুন দেখি কেন: (অ) বেদ ঈশ্বরকে বর্ণনা করে আকারহীন ও অপরিবর্তনশীল হিসেবে। এমন ঈশ্বর কিভাবে বিশাল আকৃতির মানুষের রূপ ধারণ করতে পারে যদি তিনি আকারহীনই হন? (যজুর্বেদ ৪০.৮) (আ) যদি ইহা সত্যিই হয়, তাহলে তাহা বেদের কর্মতত্ত্বের বিরোধীতা করবে। কারণ কর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির জন্মগত পরিবার পরিবর্তিত হতে পারে তার কর্ম অনুসারে। সুতরাং একজন ব্যক্তি যে শূদ্র পরিবারে জন্ম নেয়, পরের জন্মে এক রাজার পরিবারে জন্ম নিতে পারে। কিন্তু যদি শূদ্রেরা ঈশ্বরের পা থেকে এসে থাকে, তাহলে সেই একই শূদ্র ঈশ্বরের হাত থেকে কিভাবে জন্ম নেয়? (ই) আত্মা হলো সময়হীন এবং কখনো জন্ম নেয় না। সুতরাং আত্মার কখনোই কোনো বর্ণ হতে পারে না। এ শুধুমাত্র যখন আত্মা জন্ম নেয় মনুষ্য হিসেবে তখনই এর সুযোগ থাকে বর্ণ বেছে নেবার। তাহলে বর্ণ দ্বারা কি বোঝানো হয় যা ঈশ্বরের একাংশ হতে আসে? যদি আত্মা ঈশ্বরের দেহ থেকে জন্ম না নিয়ে থাকে, তাহলে কি এই বোঝায় যে আত্মার দেহ তৈরি হয়েছে ঈশ্বরের দেহের অংশ থেকে? কিন্তু বেদ অনুযায়ী, এমনকি প্রকৃতিও চিরন্তন। এবং এই একই অনু-পরমানু পুনর্ব্যবহৃত হচ্ছে নানা মনুষ্যের মধ্যে। তাই কৌশলগতভাবে ঈশ্বরের দেহ থেকে জন্ম নেয়া কারো পক্ষে অসম্ভব, এমনকি আমরা যদি ধরেও নেই ঈশ্বরের দেহ আছে। (ঈ) উপরে উল্লেখ করা পুরুষ সুক্ত রয়েছে যজুর্বেদের ৩১তম অধ্যায়ে (এবং ঋগবেদ ও অথর্ববেদ বাদে যেগুলোতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যজুর্বেদে এ হচ্ছে ৩১.১১)। প্রকৃতভাবে এর অর্থ কি তা বোঝার জন্য, আসুন দেখি এর আগের মন্ত্রের দিকে লক্ষ্য করি ৩১.১০। এতে প্রশ্ন করা হয়েছে - কে মুখ? কে হাত? কে উরু আর কেই বা পা? এর পরের মন্ত্র এর উত্তর দিয়েছে - ব্রাহ্মণ হলো মুখ, ক্ষত্রিয় হলো হাত, বৈশ্য হলো উরু এবং শূদ্র হলো পা। লক্ষ্য করুন, মন্ত্রটি কিন্তু বলছে না ব্রাহ্মণ "জন্ম নেয়" মুখ থেকে...এটি বলছে ব্রাহ্মণ "হলো" মুখ। কারণ যদি মন্ত্রটির অর্থ হতো "জন্ম নেওয়া" তাহলে এটি উত্তর দিত না আগের মন্ত্রের প্রশ্নটির "কে মুখ?" যেমন, যদি আমি প্রশ্ন করি "দশরথ কে?" উত্তরটি যদি হয় "রাম জন্ম নেন দশরথের ঘরে" তাহলে তা হবে অর্থহীন। প্রকৃত অর্থ হচ্ছে: সমাজে ব্রাহ্মণ বা বুদ্ধিজীবিরা তৈরি করে মস্তিষ্ক বা মাথা বা মুখ যা চিন্তা করে এবং বলে। ক্ষত্রিয় বা রক্ষণকর্মীরা তৈরি করে হাত যা রক্ষা করে। বৈশ্য বা উৎপাদনকারীরা এবং ব্যবসায়ীরা তৈরি করে উরু যা ভার বহন করে এবং যত্ন করে (লক্ষ্য করুন উরুর হাড় অথবা উর্বাস্থি তৈরি করে রক্ত এবং এ হচ্ছে দেহের সবচেয়ে শক্ত হাড়)। অথর্ববেদে উরুর বদলে "মধ্য" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ বোঝায় পাকস্থলী এবং দেহের মধ্যের অংশ। শূদ্র বা শ্রমিকেরা তৈরি করে পা যা কাঠামোটিকে দাঁড় করায় এবং দেহকে চলতে সক্ষম করে। পরবর্তী মন্ত্রগুলো আলোচনা করেছে অন্যান্য দেহের অংশ সম্পর্কে যেমন - মন, চোখ ইত্যাদি। পুরুষ সুক্ত বর্ণনা করেছে সৃষ্টির সূত্রপাত এবং তার স্থায়ী থাকা সম্পর্কে যার মধ্যে অন্তর্গত মানব সমাজ এবং বর্ণনা করেছে অর্থপূর্ণ সমাজের উপাদানসমূহকে। তাই এ ভীষণ করুণ অবস্থা যে এমন সুন্দর সমাজ সম্পর্কে রূপক বর্ণনা এবং সৃষ্টি সম্পর্কিত বর্ণনা বিকৃত হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে বৈদিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। এমনকি ব্রহ্ম গ্রন্থগুলো, মনুস্মৃতি, মহাভারত, রামায়ণ এবং ভগবদগীতা বলে নাই কোনোকিছুই যার কাছাকাছি উপপ্রমেয় হতে পারে এমন অদ্ভূত যে ঈশ্বর তৈরি করেছেন ব্রাহ্মণদের তাঁর মুখ হতে মাংস ছিঁড়ে কিংবা ক্ষত্রিয়দের তাঁর হাতের মাংস থেকে বা অন্যান্যসমূহ। ৫। তাই এটি স্বাভাবিক কেন ব্রাহ্মণরা বেদ অনুসারে সবচেয়ে বেশী সম্মান লাভ করেছে। এমনটিই হচ্ছে আজকের বর্তমান সমাজে। বুদ্ধিজীবিরা এবং অভিজ্ঞরা আমাদের সম্মান অর্জন করেন কারণ তারা তৈরি করেন দিক প্রদর্শনকারী সারা মানবতার জন্য। কিন্তু যেমনভাবে পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, বেদে শ্রমের মর্যাদা সমভাবে জোর দেওয়া হয়েছে এবং এই কারণেই কোনো প্রকার বৈষম্যের উপাদান নেই। ৬। বৈদিক সংস্কৃতিতে সবাইকে ধরা হয় শূদ্র হিসেবে জন্ম। তারপর ব্যক্তির শিক্ষা-দীক্ষা দ্বারা সে পরিণত হয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যতে। এই শিক্ষা-দীক্ষার পূর্ণতাকে ধরা হয় দ্বিতীয় জন্ম। একারণেই এই তিন বর্ণকে বলা হয় "দ্বিজ" বা দু'জন্মা। কিন্তু যারা রয়ে যায় অশিক্ষিত (যেকোনো কারণেই হোক) তারা সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়। তারা চালিয়ে যায় শূদ্র হিসেবে এবং করে যায় সমাজের সেবামূলক কাজসমূহ। ৭। এক ব্রাহ্মণের পুত্র, যদি সে তার শিক্ষা-দীক্ষা সম্পূর্ণ করতে অসমর্থ হয়, পরিণত হয় শূদ্রে। তেমনিভাবে শূদ্রের পুত্র অথবা এমনকি দস্যু, যদি সে তার শিক্ষা-দীক্ষা সম্পূর্ণ করে, তাহলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় কিংবা বৈশ্য হতে পারে। এ হচ্ছে নির্ভেজাল যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থা। যেমনভাবে এখনকার সময়ে ডিগ্রী প্রদান করা হয়, যজ্ঞপবিত দেয়া হতো বৈদিক নিয়ম অনুসারে। তাছাড়া, আচরণবিধির সাথে অসম্মতি ঘটলে যজ্ঞপবিত নিয়ে নেয়া হতো বর্ণগুলোর। ৮। বৈদিক ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে বর্ণ পরিবর্তনের - (ক) ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রহ্ম এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রহ্মকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য। (খ) ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯) (গ) সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন। (ঘ) প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। পরবর্তীতে তিনি তপস্যা দ্বারা মোক্ষলাভ করেন প্রায়ঃশ্চিত্তের পরে। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৪) যদি তপস্যা শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হতো যেমনভাবে উত্তর রামায়ণের নকল গল্প বলে, তাহলে প্রীষধ কিভাবে তা করল? (ঙ) নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩) (চ) ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২) (ছ) তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩) (জ) ভগবদ অনুসারে অগ্নিবেশ্য ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি জন্ম নেন এক রাজার ঘরে। (ঝ) রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভগবদ অনুযায়ী। (ঞ) হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫) (ট) শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১) এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে। (ঠ) মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন। (ড) রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন। (ঢ) প্রবৃদ্ধ ছিলেন রাজা রঘুর পুত্র কিন্তু পরে রাক্ষস হন। (ণ) ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন। (ত) বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন। (থ) বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন। ৯। "শূদ্র" শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতে অনুনোমোদিত, অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত। ১০। বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতে বোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্‌ - যজুর্বেদ ৩০.৫) একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের বলে পুরো মানব সমাজের কাঠামো। ১১। যেহেতু বেদ অনুযায়ী চার বর্ণসমূহ বলতে বোঝায় চার প্রকারের কর্মকান্ড যা পছন্দের উপর ভিত্তি করে, একই ব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে চার বর্ণের বৈশিষ্ট্য চার ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। এইভাবে সকলেই চার বর্ণের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সারল্যতার জন্য, আমরা বলি প্রধান পেশাকে বর্ণের পরিচয় হিসেবে। এবং এই কারণে সকল মানুষের উচিত পূর্ণভাবে চার বর্ণ হবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা, যেমনভাবে বেদের জ্ঞান আমাদের বলে। এই হলো পুরুষ সুক্তের সারাংশ। ঋষি বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অঙ্গীরা, গৌতম, বামদেব ও কন্ব - এরা সকলেই চার বর্ণের বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তারা বৈদিক মন্ত্রের অর্থ উদ্ভাবন করেছেন, দস্যু দমন করেছেন, দৈহিক শ্রমের কর্ম করেছেন এবং নিজেদেরকে যুক্ত করেছেন সমাজ কল্যাণের জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনায়। আমাদেরও উচিত এমনটিই হওয়া। অবশেষে আমরা দেখলাম বৈদিক সমাজ সকল মানুষকে একই জাতি বা গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে, শ্রমের মর্যাদা বহাল রাখে, এবং সকল মানুষের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে যাতে তারা নিজ নিজ বর্ণ গ্রহণ করতে পারে। বেদে কোনো প্রকার জন্মগত বৈষম্যের উল্লেখ নেই। আমরা যেন সকলে একযুক্ত হয়ে একটি পরিবারের ন্যায় একতাবদ্ধ হতে পারি, প্রত্যাখান করতে পারি জন্মগত সকল বৈষম্যকে এবং একে অপরকে ভাই-বোন হিসেবে সদ্ব্যবহার করতে পারি। আমরা যেন সকল পথভ্রষ্টকারীদের ভুল পথে এগুনো ব্যাহত করতে পারি যারা বেদে বর্ণভেদ সম্পর্কে ভিত্তিহীন দাবী করে এবং দমন করি সকল দস্যু, অসুর, রাক্ষসদের। আমরা যেন সকলে আসতে পারি বেদের আশ্রয়ে এবং একত্রে কাজ করে মানবতার বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে পারি এক পরিবার হিসেবে। সুতরাং বেদ অনুযায়ী কোনো বর্ণভেদ নেই।