Translate

Tuesday, July 1, 2014

জাকির নায়েককে ন্যাংটা করে দিল কোচিপোস্ট : প্রতি মিনিটে পাঁচটি ভুল বলেন জাকির নায়েক



নিজের প্রতিটি বক্তৃতায় ‘পণ্ডিত’ জাকির নায়েক হাজারও তথ্য দিয়ে শ্রোতা-দর্শকদের বিমোহিত করেন। তার বক্তব্যে থাকে তত্ত্ব ও তথ্যের প্রাচুর্য। এ কারণে সাধারণ শ্রোতারা বিশ্বাস করতে প্রলুব্ধ হন যে, জাকির নায়েক আসলেই একজন জবরদস্ত পণ্ডিত, জ্ঞানী লোক। কিন্তু কোচিপোস্ট এই জাকির নায়েকের পাঁচ মিনিটের একটি বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বলছে, তিনি আসলে কথা বলতে গিয়ে প্রতিমিনিটে কমপক্ষে পাঁচটি ভুল করেন।

পাঠকদের সুবিধার্থে পুরো ক্লিপটি বাংলায় ভাষান্তর করে দেওয়া হলো।

জাকির নায়েক তার এই বক্তৃতায় বলেন, ডারউইন গবেষণা করতে কেলাট্রপিক নামের একটি দ্বীপে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কেলাট্রপিক দ্বীপ বলতে পৃথিবীতে কিছু নাই। ডারউইন আসলে গিয়েছিলেন গেলাপোগাস দ্বীপে।

* এরপর জাকির নায়েক বলেন, ডারউইন দেখতে পান, গেলাপোগাস দ্বীপের পাখিরা একটি বাস্তুতন্ত্রের সদস্য হিসেবে খাদ্য প্রাচুর্যে বসবাস করছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, ডারউইন আসলে দেখতে পেয়েছিলেন, পাখিগুলো ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের সদস্য হিসেবে বসবাস করছে।

*এ প্রসংগে জাকির নায়েক আরও বলেন, বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য প্রাচুর্যের ওপর ভিত্তি করে পাখিদের ঠোঁটের আকার ছোট-বড় হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে, ডারউইন বলছেন, বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য প্রাচুর্যের ওপর ভিত্তি করে পাখির আকার, স্বর, রঙ ও খাদ্যাভাসও বদলে যায়।

*এরপর জাকির নায়েক বলেন, ডারউইন পাখিদের আচরণের এই পরিবর্তন শুধু একটি প্রজাতির পাখিতে লক্ষ্য করেছিলেন। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- ডারউইন আসলে এই পরিবর্তন চৌদ্দটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে খেয়াল করছেন।

*এবার জাকির নায়েক বলেন, চার্লস ডারউইন এই কথাগুলো থমাস থর্মটন নামের একজন বন্ধুকে চিঠি লিখে পাঠান। কিন্তু সত্য হচ্ছে, ডারউইনের থমাস থর্মটন নামের কোন বন্ধু কোন কালেই ছিল না।

*জাকির নায়েক বলেন, চার্লস ডারউইন নিজেই বলছেন, প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বদলে যাওয়ার ধারাবাহিকতা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। ডারউইন তা স্বীকার করলেও মেনে নেননি। কিন্তু সত্য হচ্ছে, প্রজাতির ধারাবাহিকতা স্পষ্ট বুঝতে না পারার সাথে বিবর্তনবাদ মিথ্যা হয়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। বরং চার্লস ডারউইন দেখিয়েছেন, কিভাবে এই ধারাবাহিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

*জাকির নায়েক এ প্রসঙ্গে আরও বলেন- এর কারণ হচ্ছে, চার্চ বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে, চার্চ কখনই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ছিল না।

* জাকির নায়েক বলেন, চার্চ গ্যালিলিওকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু সত্য হচ্ছে, চার্চ কখনই গ্যালিলিওকে মৃত্যুদণ্ড দেয়নি। আসলে তাকে ১৬৩৩ সালে চার্চ গৃহবন্দী করেছিল। এর আট বছর পর গ্যালিলিও গৃহবন্দী অবস্থায় মারা যান।

* জাকির নায়েক এবার বলেন, ডারউইন বেঁচে থাকাকালীন অন্য বিজ্ঞানীরা বিবর্তনবাদকে সমর্থন করেছিল। এই সমর্থন করার কারণ ছিল, তত্ত্বটি বাইবেলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাচ্ছে। কিন্তু তত্ত্বটি সত্য না মিথ্যা তা বিজ্ঞানীরা যাচাই করতে যাননি। প্রকৃতপক্ষে ডারউইনের জীবদ্দশায় তো নয়ই তিনি মারা যাওয়ার দীর্ঘকাল পরে বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বটি গ্রহণ করতে শুরু করে।

*জাকির নায়েক বলেন, ডারউইন মানুষের বিবর্তন বোঝাতে চার প্রজাতির হোমিনাইটদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে- ডারউইনের আলোচনায় হোমিনাইট নামের কিছু ছিল না। ডারউইন আসলে হোমোনয়েডদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। ডারউনের মতে, এদের সংখ্যা চার নয় চৌদ্দ প্রজাতির।

*জাকির নায়েক বলেন, এই হোমোনয়েডদের একটি হচ্ছে ডসনোফাইটিকেস্ট। ডসনোফাইটিকেস্ট তিন দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ওই সময়টাকে বরফ যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সত্য হচ্ছে- কোন প্রজাতির হোমনয়েডকেই এই ধরণের নামে নামকরণ করা হয়নি। এছাড়া জাকির নায়েক যেমন বলেছেন- বরফ যুগ বা আইস এজ তিন দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে এসেছিল তা সঠিক নয়, বরফ যুগ এসেছিল এক দশমিক ছয় মিলিয়ন বছর আগে।

*জাকির নায়েক বলেন, ডসনোফাইটিকেস্টদের পরই পৃথিবীতে হোমো সেপিয়েন্সদের আবির্ভাব হয়। এরা আবার ৫ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- হোমো সেপিয়েন্স বলতে আসলে আধুনিক মানুষকেই বোঝান হয়। জাকির নায়েক নিজেও হোমো সেপিয়েন্স। অথচ জাকির নায়েক বলছেন, হোমো সেপিয়েন্স বিলুপ্ত হয়ে গেছে পাঁচ লাখ বছর আগে।

* জাকির নায়েক বলেন, হোমো সেপিয়েন্সদের পরপরই আবির্ভাব হয় নিয়ানডার্থালদের। এরা এক লাখ চল্লিশ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- নিয়ানডার্থালরা ৩০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছে।

* জাকির নায়েক বলেন, নিয়ানডার্থালদের বিলুপ্তির পরপরই মানুষের বিবর্তনের চতুর্থ ধারায় ক্রোম্যাগননরা আবির্ভূত হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে- ক্রোমেগনন বলতে আলাদা কিছু নাই। ক্রোম্যাগনন বলতে আসলে হোমো সেপিয়েন্সদেরকেই বোঝান হয়।

* জাকির নায়েক বলেন, এই স্তরগুলোর মধ্যে কোন ধারাবাহিকতাই নাই। বিবর্তনে কোন ধারাবাহিকতা নাই বলে জাকির নায়েক বারবার বলতে থাকলেও বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে বিবর্তনে ধারাবাহিকতা আছে।

* জাকির নায়েক বলেন, বিজ্ঞামী আলবার্ট গোর্গি ভিটামিন সি উদ্ভাবন করেছিলেন। এই বিজ্ঞানী গর্গি, ডারউইনের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করতে ‘ক্রেজি এপ এন্ড ম্যান’ নামের একটি বই লিখেছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে- বিজ্ঞানী গর্গি ভিটামিন সি উদ্ভাবন করেননি। সত্য হচ্ছে- ‘ভিটামিন সি’ প্রাকৃতিক উপাদান। ভিটামিন সি উদ্ভাবন করা হয়নি, আবিষ্কার করা হয়েছে। আর তিনি ‘ক্রেজি এপ এন্ড ম্যান’ নামের কোন বই লিখেননি। তার বইটির নাম ছিল ‘ক্রেজি এপ’ আর এই বইটি বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে তো নয়ই, এমনকি বইটি বিবর্তনবাদ নিয়েও না। বইটির বিষয় ছিল সমাজবিজ্ঞান।

* জাকির নায়েক বলেন, রুপার্ট এলবার্ট নামের একজন বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিপরীতে আরও একটি তত্ত্ব দেন। অথচ সত্য হচ্ছে- বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন কোন বিজ্ঞানীকেই খুঁজে পাওয়া যায় না।

* জাকির নায়েক বলেন, বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক সেলসব্যারী বলেছেন, ডারউইনের তত্ত্বে বিশ্বাস করাটা অযৌক্তিক। আদতে ফ্র্যাঙ্ক সেলসব্যারী নামের কোন বিজ্ঞানীকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

* জাকির নায়েক বলেন, স্যার হুয়াইটমিট নামের আরেক জন বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে বই লিখেন। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে- স্যার হুয়াইটমিট নামের কোন বিজ্ঞানী নেই, ছিলেনও না।

কৃতজ্ঞতা: নতুন দিন ডটকম
দেখতে পারেন এখানেও : http://www.notun-din.com/?p=11276

No comments:

Post a Comment